কেউ জানে না কবে খুলবে শিশুপার্ক - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

কেউ জানে না কবে খুলবে শিশুপার্ক

শাহজাহান মোল্লা : শিশুদের সুস্থ বিকাশে শরীরচর্চা, খেলাধুলা ও বিনোদন আবশ্যক। প্রায় তিন কোটি মানুষের বসবাসের এই রাজধানীতে একটি মাত্র শিশুপার্ক থাকলেও সংস্কার ও উন্নয়নের কারণ দেখিয়ে গত ৪ বছর ধরে সেটি বন্ধ রয়েছে। শাহবাগের এই শিশুপার্কটি আধুনিকায়নের পরিকল্পনা করা হলেও তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প দুদফায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলেও সরকারের সায় মেলেনি। ফের প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। প্রস্তাব পাঠালে, সরকার অনুমোদন করলেও কাজ শুরু হতে আরও দুই থেকে তিন মাস লাগবে। আগামী বছরের প্রথম দিকে কাজ শুরু হলে, তা শেষ হতে সময় লাগবে অন্তত আরও চার বছর। প্রস্তাব, অনুমোদনের ঘুরপাকে রাজধানীর একমাত্র শিশুপার্কটি কবে চালু হবে; তা কেউ বলতে পারছে না।

ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান আমাদের সময়কে বলেন, ‘এটা ছিল ন্যাশনাল শিশুপার্ক। সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিশুরা আসত বিনোদনের জন্য। এটার বড় সুবিধা ছিল, এখানে অত্যন্ত সাশ্রয়ী খরচে বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল। ফলে প্রান্তিক ও মধ্যবিত্তরা আসত বেশি। মূলত এটি ছিল গণমানুষের বিনোদনকেন্দ্র। এই গণমানুষের পার্ককে দীর্ঘদিন ফেলে রাখা, এটা একদমই অন্যায্য।’

শিশুপার্ক নিয়ে কারা কী করছে, সেটা পরিষ্কার নয় বলে উল্লেখ করে এই নগর পরিকল্পনাবিদ আরও বলেন, বন্ধ করার পর থেকে আজ পর্যন্ত এটি পাবলিক ফোকাসের বিষয়টি ছিল বলে মনে হচ্ছে না। শিশুপার্কটি নিয়ে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে গেলে সাধারণ মানুষের মতামতের প্রয়োজন ছিল। পেশাজীবীদের মতামতও নিতে পারত, সেটা কিন্তু এখানে অনুপস্থিত। এটা নিয়ে একধরনের ধোঁয়াশা আছে। যতটুকু জানতে পেরেছি শিশুপার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড পার্র্কিং ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঢাকার মতো শহরে যেখানে সবুজের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, সেখানে গাছপালা ধ্বংস করে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং করা কতটা যৌক্তিক, সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এতে গণমানুষের শিশুপার্কে কেবল বিত্তবানদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে- পার্কটি চালু হোক, এই ধারণাটা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কম গুরুত্ব পাচ্ছে। তারা ভাবছে, এটা নিয়ে অনন্তকাল বসে থাকা যাবে। এটা না করে, সবার মতামত নিয়ে এটি দ্রুত খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।

জনঘনত্বের বিবেচনায় ঢাকায় শিশুদের জন্য সরকারি পার্কের সংখ্যা হাতেগোনা। খেলার বিভিন্ন রাইডসহ একটি মাত্র শিশুপার্ক ছিল। বেসরকারিভাবে কয়েকটি শিশুপার্ক থাকলেও সেগুলোয় খরচ অনেক বেশি। এসব পার্কের ব্যয় মেটানো সব শ্রেণিপেশার মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, শিশুপার্কসংলগ্ন স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেই সময়ের মধ্যে শিশুপার্কের সংস্কারকাজও শেষ করে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্র্যন্ত হয়নি।

জানা গেছে, নতুনভাবে সাজাতে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ৫০-৬০ কোটি ডিএসসিসির নিজস্ব তহবিল থেকে মেটাবে। বাকি টাকা সরকারি তহবিল থেকে নেওয়া হবে। গত সপ্তাহে ডিএসসিসির প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে শিশুপার্কের সব নকশা ও কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। একনেকে পাঠানোর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতি চাইবে ডিএসসিসি। সেখান থেকে সংকেত পেলে খুব শিগগিরই একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদন মিললে কাজে হাত দেবে সংস্থাটি।

ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ আমাদের সময়কে বলেন, কবে যে চালু হবে..। সর্বশেষ প্রি-একনেক সভা হয়ে গেছে। সেই সভায় পরিকল্পনা, প্রস্তাবনা, বাজেট সবকিছু তুলে ধরা হয়েছে। স্বাধীনতা স্তম্ভ সংযোগ করে দুই সাইডে যে বাগান এবং জায়গা আছে, সেগুলো নিয়েই কাজ করা হবে। স্বাধীনতা স্তম্ভের স্থাপনাও থাকবে, আমাদেরটাও থাকবে। সেভাবেই প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সম্মতি পেলে, আশা করা যায় দ্রুতই এটি একনেক সভায় উঠবে।

শিশুপার্কে কেমন পরিবর্র্তন আসবে, এ প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ৫-৬ মাস আগে আমরা একটা পরিকল্পনা পাঠিয়েছিলাম। তারা (সরকার) আরও ব্যয় কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে। ব্যয় হয়তো কমবে না। তারপরও আমরা দেখেছি, যতটুকু না হলেই না সেভাবেই করেছি। কয়েক দফা পরিবর্তন হয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে।

তিনি বলেন, আমরা সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সাশ্রয়ীভাবে শিশুদের বিনোদনের একটা সুযোগ করে দেব। পাশাপাশি স্বাধীনতার ইতিহাস, ঐতিহ্য জানার সুযোগ থাকবে। এভাবে নতুন একটা ভালো পরিকল্পনা নিয়ে আগানো হচ্ছে। চমৎকার রাইড থাকবে, দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজিয়ে একটা চমৎকার বিষয় হতে যাচ্ছে। একনেক সভায় পাস হলে ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে কাজটি শেষ হবে।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, ব্যয় কমানোর জন্য একাধিকবার একনেক বৈঠক থেকে প্রকল্পটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। এবারও ব্যয় ঠিক রেখে অন্যান্য কাজে কিছুটা পরিবর্তন এনে প্রস্তাব পাঠাতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে ডিএসসিসি। একনেকে প্রকল্পটি পাস হলেও কাজ শেষ হতে ৪ বছর সময় ধরা হয়েছে। তার মানে চলতি বছরের ডিসেম্বরে যদি অনুমোদন হয়, তাহলে ২০২৩ সালের আগে কাজই শুরু করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে ২০২৬ সালের আগে শিশুপার্কটি সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়া মুশকিল।

ডিএসসিসির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৭৯ সালে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত জাতীয় শিশুপার্কটি নতুনভাবে সাজাতে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এবার দর্শনার্থীরা যেন দেশের ইতিহাস জানতে স্বাধীনতা স্তম্ভ পরিদর্শন করতে পারে, সে জন্য পেছনে আরও একটি গেট করা হবে। সেই গেট দিয়ে স্বাধীনতা স্তম্ভে প্রবেশ করা যাবে।

প্রসঙ্গত, ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত শিশুপার্কটি ১৯৭৯ সালে ১৫ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি শিশুদের জন্য দেশের প্রথম বিনোদন পার্ক। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পার্কের গেটে বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে বন্ধ ঘোষণা করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

 

Comment here