দেশের প্রথম নারী কাজী হতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু... - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

দেশের প্রথম নারী কাজী হতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু…

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : হোমিও চিকিৎসক হিসেবে দীর্ঘদিন চিকিৎসাসেবায় রয়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর শহরের পশ্চিম কাঁটাবাড়ী (কালীবাড়ী বাজার এলাকা) গ্রামের আয়েশা সিদ্দিকী। সংসার জীবনে এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে তার। বাবা সাবেক হোমিও চিকিৎসক মরহুম আবুল কালাম আজাদ ও স্বামী হোমিও চিকিৎসক মো. সোলাইমানের হাত ধরেই এ পেশায় আসেন। তিনি শুধু হোমিও চিকিৎসক হিসেবেই নয়, নিজেকে সমাজের অন্য পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার স্বপ্ন তার ছোটবেলা থেকেই। এ কারণে বিভিন্ন সামাজিক কাজেও নিজেকে জড়িয়ে রাখেন সময় পেলেই।

এর ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের পয়লা এপ্রিল সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়, ফুলবাড়ী, দিনাজপুরের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি দেখে সাধ জাগে তিনিও হবেন কাজী (নিকাহ্ রেজিষ্টার। কিন্তু প্রকাশিত ও প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও উল্লেখ ছিল না যে, শুধুমাত্র পুরুষরাই আবেদন করবেন কিংবা নারীরা আবেদন করতে পারবেন না।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী একই সালের ১১ এপ্রিল তারিখে আয়েশা সিদ্দিকা ফুলবাড়ী পৌর সভার ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের কাজী বা নিকাহ্ রেজিষ্টার পদের জন্য যথারীতি আবেদন করেন। পরবর্তীতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয় ২০১৪ সালে নিয়োগ পরীক্ষা তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। ফলে স্থানীয়ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির সভাপতি হিসেবে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। সদস্য হিসেবে ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌরসভার মেয়র এবং কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার।

 

কমিটি নির্বাচিত প্রার্থীদের তিন সদস্যের একটি প্যানেল প্রস্তুত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে কমিটির কাছে জানতে চাওয়া হয় কমিটি কাকে নিয়োগ দিতে চায়। সেই সময় কমিটি আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়োগের সুপারিশ করে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু ২০১৪ সালের ১৬ জুন আইন মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের দ্বারা নিকাহ্ রেজিষ্টারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়,’ এমন মত দিয়ে নিয়োগ কমিটির প্রস্তাবিত প্যানেল বাতিল করে।

এ ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিকে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্টে রিট করেন। ছয় বছর পর ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালত মন্ত্রণালয়ের মতামতকে বহাল রেখে রায় প্রদান করেন। এরপর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে বিষয়টি সকলের নজরে আসে।

বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এতেও থেমে থাকেননি আয়েশা সিদ্দিকা। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের গত ৯ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে একটি আপিল দায়ের করেছেন।

আয়েশা সিদ্দিকা জানান, বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও উল্লেখ ছিল না যে নারীরা আবেদন করতে পারবে না। সেই কারণে আবেদন করা এবং সকল পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করার পর স্থানীয় কমিটি নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে নিয়োগ পাবেন না এটি তিনি মেনে নিতে পারছেন না। এ কারণে বিষয়টির সুরাহা পাওয়ার জন্য এবং নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। এতে তিনি দেশের নারীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার লড়াইকারী নারীনেত্রীদের সহযোগিতা কামনা করছেন।

তিনি আরও জানান, তার স্বামী মো. সোলাইমান তাকে সহযোগিতা ও উৎসাহ না দিলে তিনি কিছুই করতে পারতেন না। এ  কারণে তিনি তার স্বামীসহ পরিবারের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

 

Comment here