আদালত প্রতিবেদক : পুলিশ হেফাজতে আলমগীর হোসেন (৩৮) নামে এক যুবকের ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহাসহ চারজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ডিবি পুলিশের উত্তর বিভাগের ডিসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দিয়েছেন। গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন নিহত আলমগীরের স্ত্রী মোছা. আলো বেগম।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- উত্তরা পশ্চিমের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নামজুল ও পুলিশ সদস্য মো. সোহাগ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, নিহত আলমগীর পেশায় একজন প্রাইভেটকারচালক ছিলেন। তিনি একটি বায়িং হাউজের চালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা সদরের কালিবাড়ি এলাকায়। তিনি ঢাকায় উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ফুলবাড়িয়া বাজার এলাকায় স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে থাকতেন। বাইয়িং হাউজের চালকের চাকরির পাশাপাশি তিনি অবসর সময়ে গেঞ্জি, টি-শার্ট ও প্যান্ট বিক্রি করতেন।
গত ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যা রাতে শান্ত নামে আলমগীরের এক পরিচিত তাকে মোবাইল ফোনের কল করে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর এসআই মিজানসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এবং শান্তকে দেখেন আলমগীর।
তিনি যে স্থানটিতে যান সেখানেই গেঞ্জি, টি-শার্ট ও প্যান্টের ব্যবসায় করতেন আলমগীর। তিনি যাওয়ার পর এসআই মিজান তার প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে, তোর কাছে ইয়াবা আছে। পরে হাত বের করে একটি প্যকিটে দেখিয়ে বলে, ‘এই যে ইয়াবা পাওয়া গেছে।’ এরপর পুলিশ মালামালসহ আলমগীরের ভ্যান আটক করে গাড়ীতে ওঠায়।
পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় আলমগীর তার মোবাইল ফোন থেকে বাদিনীর মোবাইলে ফোন করে কান্না করে দেন। স্ত্রীকে ভ্যান চালক লাণুর মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। টাকা দিলে পুলি ছেড়ে দেবে বলেও তাকে জানান আলমগীর।
আলো বেগম স্বামীর চাওয়া ৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে লাণুর মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। তারপরেও পুলিশ আলমগীরকে থানায় নিয়ে তার ওপর অমানুষিক অত্যাচার চালায়।
আলোবেগম তার অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, গভীর রাতে স্বামী বাসায় না তার মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে অপর প্রাপ্ত থেকে অপরিচিত ব্যক্তি বলেন, আলমগীরের কাছে ইয়াবা পাওয়া গেছে, ছাড়া যাবে না।
পরদিন সকালে আলো বেগম উত্তরা পশ্চিম থানায় যান, এবং থানার দোতলায় গিয়ে স্বামীকে উসকো খুসকো অবস্থায় দেখতে পান। সেখানে আলমগীর তাকে বলেন, মিথ্যাভাবে তাকে ধরে এনে ৫ লাখ টাকার জন্য আসামিরা নিষ্ঠুর ও অমানবিক নির্যাতন করে পঙ্গু করে দিয়েছে।
আলো বেগম পরেরদিন সকাল ১০টায় থানায় গিয়ে দেখেন তার স্বামীকে আদালতে নেওয়া হচ্ছে। গত বছর ১৭ ডিসেম্বর আদালত আলমগীরকে কারাগারে পাঠায়।
এরপর গত ১৯ ডিসেম্বর আলো ও আলমগীরের বড় ভাই কেরানীগঞ্জ কারাগারে তাকে দেখতে গেলে কারারগার থেকে জানানো হয়, আলমগীরকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হবে। ওইদিন তাকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হলে বেলা সোয়া ৩টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
গত ২০ ডিসেম্বর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি হয়। সেখানে নিহতের নিতম্বে ৫ ইঞ্চি কালোদাগ, পিঠে, হাতে ও পায়ে লালচে দাগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। লাশ হস্তান্তরের পর সাক্ষি ও গ্রামের লোকজনও তা দেখেছে।
আলোর অভিযোগ তার স্বামীকে গত ১৬ ডিসেম্বর রাতে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ আটকের পর যে নির্যাতন করেছে, তাতেই কারাগারে তার মৃত্যু হয়।
Comment here