সালথায় ছাত্র নিহত-পুলিশ আহত, আসামি ৪ হাজার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

সালথায় ছাত্র নিহত-পুলিশ আহত, আসামি ৪ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে ফরিদপুরের সালথা উপজেলায়। পাশাপাশি মাদ্রাসার এক হুজুরকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে- এমন খবর রটিয়েও লোকজনকে উত্তেজিত করে তোলে একটি চক্র। এর পরই বিক্ষুব্ধ ও মারমুখী হয়ে ওঠে জনতা। গত সোমবার রাতে উপজেলা পরিষদজুড়ে তাণ্ডব চালায় তারা। সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে মামলাটি করেন। তিনি ঘটনার রাতে ফুকরা বাজার এলাকায় জনতার হামলায় আহত হন। এ ঘটনায় চার হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।

এসব তথ্য জানিয়েছেন সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সালথা থানা, উপজেলা কমপ্লেক্সসহ ওই এলাকার বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে উত্তেজিত জনতা। বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে এ তাণ্ডব চালানো হয়। সালথা উপজেলা নির্বাহী কজর্মকর্তা (ইউএনও) হাসিব সরকার বলেন, একটি মহল পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রবেশ করে ভাঙচুর, লুটপাট চালিয়ে পরে আগুন দেয়। এতে পরিষদের বেশ কিছু দপ্তর পুড়ে গেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আরও কয়েকটি কক্ষ। অনেক মূল্যবান কাগজপত্র পুড়ে গেছে।

জানা গেছে, হামলাকারীরা ইউএনও, এসিল্যান্ড, উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাচন কর্মকর্তা, থানা, কৃষি দপ্তর, এলজিইডি, প্রাণিসম্পদ ও খাদ্য বিভাগের কক্ষসহ কমপক্ষে ১০টি কক্ষ ভাঙচুর করে। পাশাপাশি এসব অফিস থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নিয়ে যায়। হামলাকারীরা তিনটি কক্ষ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে গেছে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের দুটি জিপ গাড়ি। এ ছাড়া উপজেলা চত্বরে থাকা পাঁচটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফরিদপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে জুবায়ের হাসান (২৭) নামে এক মাদ্রাসার ছাত্র নিহত হন। তার বাড়ি উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নে। এ ছাড়া র‌্যাব-পুলিশের সাত সদস্যসহ আহত হন অর্ধশতাধিক। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। সন্ধ্যা থেকে চলা এ সংঘর্ষ রাত ১২টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে রাত ১২টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ থামার পর ফরিদপুর ও সালথার ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সালথা থানার ওসি মো. আশিকুজ্জামান বলেন, থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করে। মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।

সালথার সহিংস ঘটনা নিয়ে আরও মামলা হবে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে তাণ্ডব চালানোয় সেসব প্রতিষ্ঠান আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে মামলাগুলো করবে। সালথার বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ ও র‍্যাবের পাশাপাশি টহল দিচ্ছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা।

 

Comment here