২০ টাকার পথ যেতে লাগছে ১৫০ টাকা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

২০ টাকার পথ যেতে লাগছে ১৫০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই রাজধানীর রাস্তায় গণপরিবহন নেই। গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা না দিলেও দেখা মিলছে না বাসের। বাস না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো যাত্রী। উপায় না দেখে কেউ কেউ হেঁটেই পথ চলছেন। আবার কোনো কোনো যাত্রী বেশি ভাড়া দিয়ে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও বাইকে চড়ছেন।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর মিরপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, আগারগাঁও, বিজয়স্মরণি, তেজগাঁও, ফার্মগেট, রামপুরা, বাড্ডা, বনশ্রী, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

এয়ারপোর্ট বাসস্ট্যান্ড থেকে আয়েশা আক্তার যাবেন সাতরাস্তা। তিনি একটি দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত। সকালে বাসা থেকে বের হয়ে বাসস্ট্যান্ড এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাননি। এরপর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে রওনা হন গন্তব্যেরে উদ্দেশে। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘বিএনপির গণসমাবেশর জন্য বাস কম থাকবে সেটা জানতাম। সেজন্য সময় নিয়েই বাসা থেকে রওনা হই। কিন্তু রাস্তায় এসে দেখি কোনো গণপরিবহ চলছে না। বাসের জন্য দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর ৪০০ টাকা দিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে রওনা হলাম।’

বনশ্রীর তাবাস্সুম তানজিম অন্তরা যাবেন তেঁজগাও। বেরসকারি একটি কোম্পানিতে কর্মরত তিনি। আধা ঘণ্টা ধরে হাতিরঝিল চক্রকার বাসের জন্য দাঁড়িয়েও বাসের দেখা পাননি তিনি। এরপর বাধ্য হয়ে খোঁজা শুরু করেন সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কিন্তু আকাশচুম্বী ভাড়ায় দিশেহারা অন্তরা। এরপর ভাড়ায় চালিত একটি মোটারসাইকেলে ১৫০ টাকা ভাড়া ঠিক করে রওনা হন তার গন্তব্যের উদ্দেশে। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘সকালে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে রওনা হই। রাস্তায় এসে দেখি বাস বন্ধ। কোনো ঘোষণা ছাড়াই এভাবে বাস বন্ধ করে দেওয়ার কারণ কি? আজ অফিসে যেতে দেরি হয়ে গেল। ২০ টাকার পথ যেতে এখন বাইকে গুনতে হলো ১৫০ টাকা। এভাবে চললে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন কোথায় যাবে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।’

শেওড়াপাড়া থেকে আজিম রানা যাবেন মহাখালী। তিনিও একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টায় অফিস। বাসা থেকে এক ঘণ্টা আগে বের হয়েছি। সকাল সাড়ে ৯টা বাজতে চললো কোনো বাসের দেখা পাইনি। সিএনজিচালিত অটোরিকশার ও মোটরসাইকেল যে পরিমাণ ভাড়া দবি করে তা অনায্য। তাই বাধ্য হয়ে হেঁটেই গন্তব্যেরে উদ্দেশে রওনা হয়েছি।’

সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে মোহাম্মদপুর আল্লাহ করিম মসজিদের সামনে দেখা যায় ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। কথা হয় এই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কর্মী বিধান নাথ দীপুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই আমরা এখানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা রুখে দেব।’

শ্যামলী কলেজগেট জেনেভা ক্যাম্পের সড়কের মুখে, গাবতলী মাজার রোড, বেড়িবাঁধ রোডসহ বেশ কয়েকটি সড়কের মোড়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধানে চলছে এমন অবস্থান কর্মসূচি। এসব অস্থায়ী মঞ্চে লাগানো মাইকে চলছে দেশের গান ও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। কোনো কোনো মঞ্চে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখা না গেলেও সেখানে পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বসে থেকে গল্প-গুজব করতে দেখা গেছে।

এদিকে, একই চিত্র রাজধানীর প্রবেশপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশেও। গাড়ি না পেয়ে পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

গার্মেন্টস কর্মী শিউলী বলেন, ‘সকাল ৭টা থেকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু এখনো কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। এখন কি করব, পেটের দায়ে চাকরি বাঁচাতে হলে তো আমার যেতেই হবে। অফিস কি আমাদের মতো গরিব মানুষের কথা বুঝবে। এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে। এখন অফিসে পায়ে হেঁটে যেতে ৪৫ মিনিট সময় লাগবে।’

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, সকাল থেকে সড়কে গাড়ির চাপ কম রয়েছে। তাই অনেক মানুষ হেঁটেই যার যার কর্মস্থলে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘ঢাকায় বাস বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। মালিকরা হয়তো আতঙ্কের কারণে গাড়ি কম চালাচ্ছেন। এছাড়া যাত্রী না থাকায় দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকতে পারে।’

বহু নাটকীয়তার পর রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে সমাবেশ শুরু হবে। তবে অনুমতি পাওয়ার পর শুক্রবার বিকেল থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন দলটির নেতাকর্মীরা। রাতেই প্রায় ভরে যায় গোলাপবাগ মাঠ। এরপর আজ ভোর হতেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা যোগ দিতে থাকেন সমাবেশে। এতে করে মাঠ ছাড়িয়ে সড়কে নেমেছে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। বিএনপির নেতাকর্মীদের মিছিল আর স্লোগানে মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।

 

Comment here