অধিকাংশ পোশাককর্মী করোনার টিকা নেননি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

অধিকাংশ পোশাককর্মী করোনার টিকা নেননি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অধিকাংশ পোশাককর্মী এখনো করোনা প্রতিরোধক টিকা নেননি বলে উঠে এসেছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজ (এমএফও) এক যৌথ জরিপে। মোট ১ হাজার ২৮৫ জন পোশাক শ্রমিকের ওপর পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

সানেম বলছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী তিন-চতুর্থাংশের বেশি উত্তরদাতা নারী শ্রমিক, যা সামগ্রিকভাবে এই খাতের বাস্তব চিত্রের প্রতিফলন। কোভিড ১৯-এর কারণে দেওয়া লকডাউন পরিস্থিতি এবং টিকার ব্যাপারে শ্রমিকদের সচেতনতা ও মতামতের ওপর জরিপে আলোকপাত করা হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী মাত্র ২ শতাংশ শ্রমিক টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। টিকাদান কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত (যোগ্য বা উপযুক্ত) কিনা সেই প্রশ্ন করা হলে ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা টিকাদান কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত, অর্থাৎ তারা চাইলে টিকা গ্রহণ করতে পারতেন। ২৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা টিকা কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত নন এবং ৩৪ শতাংশ জানিয়েছেন যে, এ বিষয়ে তারা কিছু জানেন না।

আবার টিকার জন্য নির্বাচিত এমন ৩৬ শতাংশ উত্তরদাতার মধ্যে ৭৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা টিকা নিতে চান। যারা টিকাদান কর্মসূচির জন্য জরিপ চলাকালীন সময় পর্যন্ত নির্বাচিত ছিলেন না, তাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ জানিয়েছেন, সুযোগ থাকলে তারা টিকা নেবেন। আর ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা টিকার জন্য নির্বাচিত কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন, তাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তারা ভ্যাক্সিন নিতে আগ্রহী। সব মিলিয়ে ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন যে, সুযোগ থাকলে তারা টিকা নিতে আগ্রহী এবং ৩১ শতাংশ জানিয়েছেন যে, তারা টিকা নিতে চান না।

টিকা নিতে চান না এমন ৩১ শতাংশ উত্তরদাতার মধ্যে ৪৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের শরীরে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, অসুস্থ হতে পারেন বা মারা যেতে পারেন, এই আশঙ্কায় তারা ভীত। ২৩ শতাংশ জানিয়েছেন, টিকা নেওয়ার কোনো প্রয়োজনীয়তা বা উপকারিতা আছে বলে মনে করেন না। ১৭ শতাংশ মনে করছেন, তারা নিরাপদে থাকার জন্য ধর্মবিশ্বাসের ওপর ভরসা রাখেন। ৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা গর্ভবতী অথবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা বা এলার্জিতে ভুগছেন, ২ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের স্বামী নিষেধ করেছেন। ১ শতাংশের কিছু কম সংখ্যক উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা বাকি সবার টিকা নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। আর ৭ শতাংশ অন্যান্য কারণে ভ্যাক্সিন নিতে চান না।

জরিপের এই তথ্যগুলো থেকে বোঝা যায়, কোভিড ১৯-এর টিকাদানের ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য শ্রমিকদের কাছে নেই। টিকা নিতে চান এমন শ্রমিকদের মধ্যে মাত্র ২২ শতাংশ এর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেন বলে জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক কারণ কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণ নিশ্চিত করা না গেলে বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে কর্মরত লাখো শ্রমিকের জীবন ঝুঁঁকির মুখে পড়বে। তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন, রপ্তানি ও সামগ্রিকভাবে পুরো অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কারখানার মালিকপক্ষ, সরকার, নীতিনির্ধারক ও অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলোকে সম্মিলিতভাবে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সানেম জানায়, গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ নামে প্রকল্পের অধীনে তারা ও এমএফও ২০২০ সালের এপ্রিল মাস থেকে বাংলাদেশের মূল পাঁচটি শিল্প এলাকায় (চট্টগ্রাম, ঢাকা শহর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং সাভার) কর্মরত পোশাক শ্রমিকদের কর্মসংস্থান, আয়, খাদ্য নিরাপত্তা, মজুরির আধুনিকীকরণ ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, নিয়মিত ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্যভিত্তিক নীতি গ্রহণ ও বৈশ্বিক ব্যান্ডগুলোকে শ্রমিকমুখী উদ্যোগ নিতে সহায়তা করা, যা পোশাক শ্রমিকদের জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় এবং তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ওপর কোভিড ১৯-এর প্রভাব আরও ভালোভাবে বুঝতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সহায়তার ক্ষেত্রেও এই প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

এদিকে দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যেও পোশাক খাতের কারখানাগুলোকে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদিও পর্যাপ্ত গণপরিবহনের অনুপস্থিতিতে কর্মস্থলে যাতায়াত করতে হয়েছে বিকল্প উপায়ে বলে জানিয়েছেন জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮ শতাংশ উত্তরদাতা। মাত্র ৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা কারখানার পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, শ্রমিক পরিবহনের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করার যথাযথ পদক্ষেপ সব কারখানা নেয়নি। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৬ শতাংশ শ্রমিক হেঁটে, ১০ শতাংশ রিকশায়, ৬ শতাংশ অটোরিকশায়, ২ শতাংশ বাসে এবং ২ শতাংশ সিএনজি অটোরিকশাতে করে কর্মস্থলে যান বলে জানিয়েছেন। সর্বোপরি ৯২ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাদের যাতায়াতের মাধ্যমে কোনো পরিবর্তন আসেনি, যা থেকে বোঝা যায় যে, অধিকাংশ শ্রমিক সাধারণত হেঁটে কর্মস্থলে যান।

 

Comment here