গোলাম সাত্তার রনি : নতুন ও দৃষ্টিনন্দন সাজে তৈরি হচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবন। অভ্যন্তরীণ যাত্রীদের চাপ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান বাড়াতে এই উদ্যোগ নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। নতুন এই প্রকল্পে থাকছে আন্তর্জাতিক মানের ২টি লাউঞ্জ, ৩০০ যাত্রী বসার ব্যবস্থা, স্মোকিং রুম, ডায়াপার চেঞ্জিং স্টেশন, মাদারস কর্নার ও প্রেয়ার রুম।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পুরনো টার্মিনাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় ৮ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোর তৈরি করা হচ্ছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফ্লোরটি তৈরি করছে। ফ্লোরের অর্ধেক অংশজুড়ে থাকবে ২টি আন্তর্জাতিক মানের লাউঞ্জ আর বাকি অর্ধেক অংশে থাকবে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থাসহ স্মোকিং রুম, ডায়াপার চেঞ্জিং স্টেশন, মাদারস কর্নার ও প্রেয়ার রুম। সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ফ্লোরটি বিদেশি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরের আদলে নির্মাণ করা হবে। ফ্লোরে ওঠার জন্য থাকবে বিশাল লিফট।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদুল আহসান আমাদের সময়কে বলেন, বেসরকারি পর্যায়ে লাউঞ্জ নির্মাণের ফলে যাত্রীসেবা বাড়বে। একসঙ্গে অনেক বিমান ওঠানামা করলে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যাত্রীজট হয়। যাত্রীরা ইচ্ছা করলেই এই লাউঞ্জে আরামদায়কভাবে অবস্থান করতে পারবে।
দেশের বিদ্যমান যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আর প্রতিদিনই বাড়ছে যাত্রীসংখ্যা ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর ব্যবহার। বিশেষ করে সরকারের অনেক মেগা প্রজেক্ট দেশের বিভিন্নস্থানে চলমান থাকায় দ্রুত এবং সময় সাশ্রয়ী মাধ্যম হিসেবে বিদেশি প্রকৌশলী, পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিমান পরিবহন এখন অভ্যন্তরীণ চলাচলের অন্যতম মাধ্যম। করোনা মহামারীর মধ্যেও বর্তমানে প্রতিটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে আসন সংকট চলছে। এই সংকট মোকাবিলায় এয়ারলাইন্সগুলোও প্রতিনিয়ত তাদের ফ্লাইট বাড়িয়ে চলছে। বিপুল এই যাত্রীচাপ সামলাতে গত কয়েক মাস ধরে হিমশিম খেতে দেখা গেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। বিশেষ করে শাহজালালের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনটি খুবই ছোট হওয়ায়
দেশি-বিদেশি পর্যটক ও দেশি যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ভিআইপি-সিআইপি ও প্রবাসী যাত্রীদের বসার জন্যও পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না। কর্তৃপক্ষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরনো টার্মিনালের পাশে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ফ্লোর নির্মাণ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিলেন না।
সংশ্লিষ্ট সেক্টরের বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য দেশের ক্রমবর্ধমান বিমানযাত্রী বৃদ্ধির হার এবং অভ্যন্তরীণ নতুন এয়ারলাইন্স চালু হলে বর্তমান টার্মিনালে আর যাত্রীদের জায়গা সংকুলান হবে না। এই অবস্থায় ভবিষ্যতের যাত্রীচাপ সামাল দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের ওপরে আট হাজার বর্গফুটের আরও একটি বহির্গমন লাউঞ্জ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
বিমানবন্দর কর্র্তৃপক্ষের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বেবিচকের ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ও দুটি ব্যাংকের যাত্রীসেবা লাউঞ্জ স্থাপনের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। চলমান এই প্রকল্পে বেবিচকের কোনো আর্থিক ব্যয় হচ্ছে না। প্রকল্পে দুটি আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবা লাউঞ্জ, সাধারণ যাত্রীদের বসার জন্য স্থান, মাদারস কর্নার, নামাজের জন্য নিদিষ্ট ব্যবস্থা রয়েছে। যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার জন্য প্রথমবারের মতো অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে লিফ্ট সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৩শর বেশি যাত্রী বসার জন্য আরামদায়ক চেয়ার, স্মোকিং রুমসহ ডায়াপার চেঞ্জিং স্টেশনেরও ব্যবস্থা থাকছে নতুন এই অংশে। প্রায় ৩০ বছরের পুরনো অব্যবহৃত ছাদে নির্মিত প্রকল্পটি ভবিষ্যতে যাত্রীচাপ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী রাজস্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং উল্লেখিত সুযোগ-সুবিধার কারণে যাত্রীসেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।
Comment here