বরিশাল ব্যুরো ; বরিশাল নগরীতে তামান্না আফরিন (১৫) নামে এক ছাত্রীকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে তার কথিত প্রেমিক সাদমান গালিবের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে তামান্নার বাবা রফিকুল ইসলাম টিপু সাদমানকে একমাত্র আসামি করে কোতোয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
তামান্না আফরিন নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা এআরএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আর অভিযুক্ত সাদমান নগরীর জুমির খান সড়কের বাসিন্দা।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চাইনিজ খাবারের সঙ্গে চেতনাশক ওষুধ মিশিয়ে তা খাওয়ানোর পর অচেতন করে অশ্লীল ছবি তুলে সটকে পড়েন সাদমান। বিষয়টি বুঝতে পরে গত ২ এপ্রিল দুপুরে তামান্না আত্মহত্যা করেন।
তামান্নার বাবা বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস আগে তামান্নাকে চাইনিজ খাবারের আড়ালে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে নিজ বাসায় নিয়ে যায় গালিব। খবর পেয়ে গালিবের বাসা থেকে প্রায় সজ্ঞাহীন অবস্থায় তামান্নাকে উদ্ধার করি। ওইদিন তামান্নার অশালীন ছবি এবং ভিডিও মোবাইল ফোনো ধারণ করে রাখে গালিব। পরে ওই ছবি এবং ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তামান্নার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে গালিব। এমনকি ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে তামান্নার সঙ্গে বিভিন্ন সময় শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছে বলে সন্দেহ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন ধরে তামান্নার সঙ্গে একেবারে যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয় গালিব। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তামান্না। প্রেমিকের প্রতারণার কারণে রাগে-ক্ষোভে এবং অভিমানে গত ২ এপ্রিল দুপুরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে তামান্না।’
নিহতের পরিবার জানিয়েছে, মৃত্যুর পর তামান্নার পড়ার টেবিলে অংক খাতায় তামান্নার হাতের লেখা একটি চিরকুট (সুইসাইড নোট) পায় তার পরিবার। চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমি আজ সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য শুধু একজনই দায়ী। তার নাম হলো সাদমান গালিব। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু ও (গালিব) আমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে চায় না। তাই আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না ভেবে সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমি সাদমানকে অনেক ভালোবাসি, ও বুঝল না। আশা করি আমার মরার পরও (গালিব) আমার ভালোবাসাটা অনুভব করবে। আমি আর বেশি কিছু বলতে চাই না। বিদায় সাদমান।’
ওই চিরকুটসহ গত মঙ্গলবার সাদমান গালিবের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন তামান্নার বাবা রফিকুল ইসলাম টিপু। তিনি অভিযোগ করেন, কথিত প্রেমিকের প্ররোচণায় গত ২ এপ্রিল তার মেয়ে তামান্না আত্মহত্যা করেছে। এখন পর্যন্ত পুলিশ তার অভিযোগ মামলা হিসেবে রুজু করেনি।
এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক অলিভ জানান, তামান্নার ব্যবহৃত মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। মুঠোফোনে কিছু আলামত পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন থানার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম।
তিনি জানান, পুলিশ এ বিষয়ে কোনো তাচ্ছিল্য করছে না। কোনো শৈথিল্যও দেখাচ্ছে না। ওই মেয়েটির মোবাইল ফোনে পাওয়া বিভিন্ন ছবি এবং তার লেখা চিরকুট যাচাই করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবার দেওয়া অভিযোগ মামলা হিসেবে রুজু করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
Comment here