‘আগুন সব নিয়ে গেছে, আমারে নিয়ে গেল না কেন’ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

‘আগুন সব নিয়ে গেছে, আমারে নিয়ে গেল না কেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুনে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৫ হাজার দোকান পুড়ে গেছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন।

আজ মঙ্গলবার সকালে লাগা ওই আগুনে সবকিছু হারিয়ে পাগলপ্রায় বঙ্গবাজার টিন শেড মার্কেটের দোকানি আবদুর রাজ্জাক। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আগুন সব নিয়ে গেছে, আমারে নিয়ে গেল না কেন।’

আবদুর রাজ্জাক জানান, আজ সকালে আগুন লাগার খবর পেয়ে বড় ভাইয়ের সঙ্গে মার্কেটের আসেন তিনি। এসে দেখেন, চোখের সামনে দাউ দাউ করে পুড়তে দেখেছেন নিজের দোকানের কাপড়। এক টুকরো কাপড়ও বের করতে পারেননি। যতক্ষণে মার্কেটে পৌঁছেছেন, ততক্ষণে স্বপ্ন পুড়ে কয়লা।

জানা যায়, ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বড় আয়ের স্বপ্ন নিয়ে অপেক্ষা করেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। দেশের ব্যবসায়ীদের কাপড়ের বড় অংশ এই মার্কেট থেকেই পাইকারি বিক্রি করা হয়। পাইকারির পাশাপাশি খুচরা বিক্রিও চলে মার্কেটে। যেহেতু রমজান মাস, তাই কাপড়ের বড় লট গুদাম ভর্তি করে রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা।

বঙ্গবাজারের এনেক্স টাওয়ারের চতুর্থ তলার ওপর সব গুদাম। পাশে টিন শেডে মার্কেটের একটি দোকানেরও অস্বিত্ব নেই। সব পুড়ে ভষ্মিভূত হয়েছে। কাপড় পুরে কয়লায় পরিণত হয়েছে। এই পোড়া কাপড়ের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন পুড়ে গেছে।

আবদুর রাজ্জাকের মতো সারা বেলা জামদানি শাড়ির দোকানের কর্মচারী আনিছুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমাদের মহাজনের কোটি টাকার ওপরে মালামাল ছিল। মাত্র কয়েকটা গাট্টি বের করতে পারছি। বাকি সব পুরে শ্যাষ। যে শাড়ি এক একটা ৩০-৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সব চেয়ে কম দামে যেটা, সেটাও ৭ হাজারের কম না। যতটুকু বের করতে পারছি, ততটুকু বুকে আয়ছে। বাকি সব পুড়ে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পাইকারি দোকান। এখান থেকে সারা দেশে মাল সরবরাহ হয়। আমাদের মালিকের ১৭ জন স্টাফ আছেন, মার্কেটে কাজ করে। এই ঈদের কিভাবে কী করবে মালিক, তো শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। কোনো কথা বলতে পারছেন না।’

তাদের মতো আরেকজন ব্যবসায়ী সুমন। তিনিও পোড়া মার্কেটের দিকে শুধু তাকিয়ে দেখছেন। কোনো কথা বলতে পারছেন না। বারবার মাথায় হাত দিয়ে বোঝাচ্ছেন, ‘আমার সব শেষ।’ এখানকার ব্যবসায়ীরা ঈদুল ফিতরের সময় যে পরিমাণ কাপড় বিক্রি করেন, তা দিয়ে বছরের বেশির ভাগ সময় পার করেন। বঙ্গবাজার মার্কেট পাইকারি কাপড় ব্যবসায়ীদের জন্য বিখ্যাত।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজার মার্কেটের আড়াই হাজারসহ আশপাশের মার্কেট, সব মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার দোকান পুড়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জানামতে, শুধু বঙ্গবাজার কাঠের মার্কেটেই আড়াই হাজারের মতো দোকান রয়েছে। এখানে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা দোকান করেন। সামনে ঈদ, সবাই ঈদ কেন্দ্রীক বেচাকেনার জন্য পণ্য তুলেছেন দোকানে। এমন সময় এ অগ্নিকাণ্ড বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে এনেছে। এ ব্যবসায়ীদের পুঁজি বলতে দোকানের মালামালই। মালামাল পুড়ে গেলে তাদের আসলে পুঁজি বলতে সব শেষ।’

এর আগে আজ সকাল ৬টা ১০ মিনিটের দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিটের চেষ্টায় দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

Comment here