ফেনী প্রতিনিধি : ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলার রায়ে ১৬ জনের ফাঁসিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। দ্রুত রায় কার্যকরের পাশাপাশি নিজেদের জানমালের নিরাপত্তাও চেয়েছেন তারা। কৃতজ্ঞতা জানাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান নুসরাতের বাবা-মা।
আজ বৃহস্পতিবার ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার ঘটনায় প্রধান শিক্ষক সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। দুপুরে নিজের বাড়িতে সাংবাদিকদের রায়ের প্রতিক্রিয়া জানান নুসরাতের মা শিরীন আক্তার।
শিরীন জানান, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কারণে মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার পেয়েছেন জানিয়ে তার সঙ্গে আবারও দেখা করে ধন্যবাদ জানাতে চান।
নুসরাতের মা বলেন, ‘যেদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি, সেদিন আমাকে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, “মেয়েটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সম্ভব হয়নি। এর সুষ্ঠু বিচার হবে।” এ রায় যাতে উচ্চ আদালতে বহাল থাকে এবং দ্রুত কার্যকর হয় সে প্রত্যাশা করি।’
আজ আসামিদের ফাঁসির আদেশের পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। জরিমানার টাকা নুসরাতের পরিবারকে দেওয়ারও আদেশ দেন এই বিচারক।
রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নুসরাতের বাবা একেএম মুসাও সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের প্রতি নিরাপত্তাও দাবি করেন। তদন্ত দ্রুত শেষ করায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান তিনি।
মামলার বাদী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘রায়ে আমরা শতভাগ সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ায় আমার বোন হত্যার ন্যায় বিচার চেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত সময়ে আমাদেরকে ন্যায়বিচার উপহার দিয়েছেন। এ জন্য আমরা তার প্রতি অকৃতজ্ঞ।’
নোমান জানান, রায় ঘোষণার পর আদালতে আসামিরা তাকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে। দোষীরা আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। তিনি পরিবারসহ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরুন্নবীকে এ জন্য ধন্যবাদ জানাই। আগামীতে আমাদের পরিবারের সদস্যদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করতে চাই। তিনি আমাদেরকে বলেছিলেন, ‘আমাদের পাশে থাকবেন। তিনি কথা দিয়ে কথা রেখেছেন’।’
নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেন, ‘আপুকে হারিয়ে যতটা কষ্ট পেয়েছি, আজকে এ রায়ের মাধ্যমে কিছুটা লাঘব হয়েছে। আমরা আজকের রায়ে শতভাগ সন্তুষ্ট। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। রায় দ্রুত কার্যকর করে যেন মানুষরূপী হায়নাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।’
নুসরাতের দাদা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নুসরাত আমার কলিজার ধন ছিল। শরীরের মাংস নিয়ে সে কবরে যেতে পারেনি। মৃত্যুর আগে তার পোড়া যন্ত্রণা সে আর এক মাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ বুঝবে না। সবাই আমাকে বলছে খুনিদের ফাঁসি হয়েছে। আমি খুশি হয়েছি। আমিতো দুনিয়া ছেড়ে চলে যাব। আমার ছেলে, ছেলের বউ ও নাতিদের কে দেখবে? আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছিলাম, আজ আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুলিশ, পিবিআই, সাংবাদিকদের ও বিচারককে ধন্যবাদ জানাই।’
এর আগে গত ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন নুসরাতের পরিবার। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করে মেয়েকে হত্যার বিচার চান তারা। প্রধানমন্ত্রীও তাদের দোষীদের বিচারের আশ্বাস দেন।
Comment here