আশুলিয়া ধামরাই ও পাবনায় এবিটির নারীসহ ৭ সদস্য গ্রেপ্তার জেলে বসেই জঙ্গি কার্যক্রম - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

আশুলিয়া ধামরাই ও পাবনায় এবিটির নারীসহ ৭ সদস্য গ্রেপ্তার জেলে বসেই জঙ্গি কার্যক্রম

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যরা জেলখানা থেকেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করছে। জেলখানায় থাকার সময় দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের সংস্পর্শ পাচ্ছে। আর তাতেই জঙ্গি কার্যক্রমের দিকনির্দেশনা পাচ্ছে। পরে জামিনে বেরিয়ে ফেসবুক ছাড়াও বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা এবং সদস্য সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এবিটির শীর্ষপর্যায়ের স্থানীয় জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ ও পরিচিতি বাড়ানোর চেষ্টাও চলছে অনলাইনে। র‌্যাব ৪-এর অভিযানে ঢাকার আশুলিয়া ও ধামরাই থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত এবিটির নারীসহ পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার ও তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব ৪-এর একটি দল গত শুক্রবার রাত থেকে গতকাল শনিবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- অলিউল ইসলাম ওরফে সম্রাট ওরফে আবদুুল্লাহ (২৩), মোয়াজ্জিম মিয়া ওরফে শিহাদ ওরফে আল্লাহর গোলাম (২০), সবুজ হোসেন ওরফে আবদুল্লাহ এবাজ উদ্দিন (২৬), আরিফুল হক ওরফে আরিফ ওরফে হৃদয় (২০) ও রাশিদা ওরফে হুমায়রা (৩৩)।

এদিকে গত শুক্রবার রাতে পাবনায় অভিযান চালিয়ে আনসার আল ইসলামের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-২। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সাকিব আল ইমতিহান ও নাজমুস সাদাত ফাহিম। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে ৪৪টি উগ্রবাদী বই, জঙ্গি প্রশিক্ষণের ট্রেনিং ম্যানুয়ালসহ বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক লিফলেট। র‌্যাব জানায়, তারা নাশকতার জন্য দেশের বাইরে থেকে অস্ত্র সংগ্রহের কাজ করছিল।

গতকাল শনিবার র‌্যাব ২-এর কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, গত ৩০ জানুয়ারি ও ১৩ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জ ও সিলেটে পৃথক অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের আত্মঘাতী দলের চার সদস্যকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাকি সদস্যদের ধরতে মাঠে নামে র‌্যাব। শুক্রবার রাতে ও শনিবার ভোরে পাবনার চরঘোষপুর ও নিউমার্কেট এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে দুজনকে আটক করা হয়। তিনি আরও বলেন, জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করতে ধর্মভীরু সহজ-সরল যুবতীদের টার্গেট করে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করে। এ ছাড়া ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম ও ফেসবুকে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে সদস্য বাড়াতে কাজ করছিল।

গতকাল বিকালে কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গ্রেপ্তারকৃত অলিউল ইসলাম আবদুল্লাহ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তিনি এইচএসসি পাসের পর কিছুদিন স্থানীয় মসজিদে আরবি শিখেছেন। আনসারুল্ল­াহ বাংলা টিমে সম্পৃক্ততার কারণে ২০১৯ সালে আশুলিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। জেলখানায় থাকাকালে দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের সংস্পর্শ পান এবং সেখানেই তাদের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা নেন। তিনি আরও বলেন, ফেসবুক ছাড়াও তিনি বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালু রাখেন। তিনি একটি উগ্রবাদী চ্যানেলের অ্যাডমিন হিসেবে উগ্রবাদী কার্যক্রম ও সদস্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। এর আগে আটক মাওলানা জসিমুদ্দীন রাহমানির অনুসারী শীর্ষ জঙ্গিদের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তাদের কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বর্তমানে দক্ষিণ অঞ্চলের আনসারুল্ল­াহ বাংলা টিমের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছিলেন। তিনি প্রায় তিন বছর ধরে আনসারুল্ল­াহ বাংলা টিমের শীর্ষনেতার সঙ্গে অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী ডিজিটাল কনটেন্ট পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার মোয়াজ্জিম মিয়া ওরফে শিহাদ ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমে আকৃষ্ট হতো। ধীরে ধীরে তিনি সশস্ত্র জঙ্গিবাদে অংশ নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফেসবুকে আনাস আদনান নূর নামক জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসারুল্ল­াহ বাংলা টিমের সদস্যপদ নেন। বর্তমানে তিনি আনসারুল্ল­াহ বাংলা টিমের একজন সক্রিয় সদস্য। মেসেঞ্জারে একটি উগ্রবাদী গ্রুপের তিনি অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করেন। আল্লাহর গোলাম আইডিতে সদস্য সংগ্রহ এবং উগ্রবাদের উদ্দেশ্যে চাঁদা সংগ্রহে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন। অনলাইন মোবাইল মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে তিনি চাঁদা সংগ্রহ করতেন। তার কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের রেজিস্টার জব্দ করা হয়। বর্তমানে সাভারের একটি মাদ্রাসায় তিনি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

Comment here