শাহজাহান আকন্দ শুভ : ডিবি পুলিশের পরিচয়ে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধের লাগাম টানতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জ্যাকেট বদলে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ কাপড় দিয়ে তৈরি নতুন জ্যাকেটে থাকছে আসল পুলিশ শনাক্তের বেশকিছু নিরাপত্তা ফিচার। এর মধ্যে অন্যতম হলো কিউআর কোড। এই কিআর কোডটি গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের নতুন জ্যাকেটে কিউআর কোড জেনারেটেড প্রিন্ট যুক্ত করা থাকবে। যেটি স্ক্যান করলেই সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যের ছবিসহ বিস্তারিত পরিচিতি চলে আসবে।
গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মাহবুব আলম গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের বিদ্যমান জ্যাকেটে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ফিচার নেই। নতুন জ্যাকেট চালু করার মূল উদ্দেশ্য গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে যেসব অপরাধ হয় তা ঠেকানো। আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন এই জ্যাকেট ডিবির প্রতিটি সদস্যকে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বছরের পর বছর ধরে রাজধানীতে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- সংঘটিত হয়ে আসছে। অন্তত ২০ থেকে ৩০টি গ্রুপ ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপরাধ করছে। এসব গ্রুপে চাকরিচ্যুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্যও অনেক সময় যুক্ত থাকে। বিভিন্ন সময়ে ধরাও পড়েছে পুলিশ বা র্যাবের হাতে। শুধু গত বছরই রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
অভিযানে প্রায় ৩শ ভুয়া ডিবি পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু গ্রেপ্তারের কিছুদিন পরই জামিনে এসে তারা পুনরায় অপরাধে যুক্ত হয়। শুধু গ্রেপ্তার করে তাদের নিয়ন্ত্রণ করাটা দুরূহ এ বিষয়টি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা অনুধাবন করেন। এমন প্রেক্ষাপটেই ভুয়া ডিবি পুলিশের অপরাধের লাগাম টানতে গত বছরের শেষদিকে বিশেষ নিরাপত্তা ফিচারযুক্ত জ্যাকেট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ভুয়া ডিবি পুলিশচক্রের সদস্যরা কখনো পুলিশ, কখনো র্যাবের পোশাকে ছদ্মবেশ ধারণ করেন। আর সঙ্গে থাকে আগ্নেয়াস্ত্র। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মপদ্ধতি অনুকরণ করে ভুয়া পুলিশ-র্যাবচক্র গড়ে তুলে ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ করে। আবার গাড়িতে সাঁটানো থাকে বাহিনীর লোগো। তাই সাধারণের পক্ষে আসল-নকল চেনা মুশকিল হয়ে পড়ে। আসল গোয়েন্দা পুলিশ চিনতেই নতুন জ্যাকেট দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশের নতুন যে জ্যাকেট দেওয়া হচ্ছে, তার কাপড়টা খোলা বাজারে মিলবে না। প্রচ- গরমেও পরা যাবে। এই জ্যাকেটে থাকবে কিউআর কোড জেনারেটেড প্রিন্ট। এ ছাড়া ১ দশমিক ৫ ইঞ্চি লম্বা ডিবি লেখা রিফ্লেকটিভ টেপ এটাচমেন্ট এবং মিনি স্টেটমেন্ট পেচ পকেট (ওয়াকিটকি ব্যাটারি থাকবে)।
জানা গেছে, গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা যে কোনো অভিযানে সাধারণত সাদা পোশাকে অভিযান করে থাকে। সাদা পোশাকের ওপর তাদের গায়ে জ্যাকেটও থাকে। যেসব অভিযানে জ্যাকেট প্রদর্শন করলে অভিযান লক্ষ্যচ্যুত হতে পারে, সেক্ষেত্রে সাধারণত জ্যাকেট পরা হয় না। কিন্তু জ্যাকেট আভিযানিক দলের সঙ্গে থাকে। সর্বশেষ ২০১১ সালে গোয়েন্দা পুলিশের জ্যাকেট পরিবর্তন করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
Comment here