ইন্টারনেট কতটা উন্মুক্ত করছে আপনাকে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
লাইফস্টাইল

ইন্টারনেট কতটা উন্মুক্ত করছে আপনাকে

প্রযুক্তি ডেস্ক : তথ্যের জন্য এ মুহূর্তে সারা পৃথিবীতেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ইন্টারনেট-এনিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করবে এমন মানুষ নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া যাবে না। তথ্যের জন্যে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্র সকলেই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে ইন্টারনেটের ওপর। মূলত তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেই আমরা ইন্টারনেটের তাৎপর্য টের পেয়ে থাকি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধুর সঙ্গে চ্যাটিং করে সুন্দর সময় পার করছি, জেনে নিচ্ছি একে অপরের তথ্য কিংবা তৃতীয় কোনো ব্যক্তির তথ্যও।

আরেকটি মজার বিষয়, নিত্যদিনের চলাফেরা আর মানুষের সঙ্গে মেলামেশায় নিজেকে সফলভাবে রহস্যময় হিসেবে প্রতিপন্ন করতে পারলেও দিন শেষে সব রহস্য উন্মোচন করে দিচ্ছেন নিজেই কেবল একটি স্ট্যাটাস দিয়ে। নিজের রুচি, পছন্দ- অপছন্দ, ভালো লাগা-মন্দ লাগা থেকে শুরু করে বিশ্বাস, চেতনা, মূল্যবোধ তথা আদর্শের প্রকাশ ঘটাচ্ছেন একের এক স্ট্যাটাস দিয়েই। অথচ মাত্র এক দশক আগেও যেখানে নিজের ভাবনা কিংবা আদর্শের কথা জানান দিতে, লিখতে হতো কিনা গোটা একখানা বই!

তথ্য পাচারের কত শঙ্কা বা অভিযোগই না চোখে না পড়ে গুগল, ফেসবুক আর মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে! অথচ নিজের তথ্য সবার কাছে পাচার করছি আমরা নিজেরাই কখনো জেনে শুনেই আবার কখনো না জেনেই।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে, যাতে উঠে এসেছে এমন কিছু মজার তথ্য যা আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে ইন্টারনেট আমাদের কতটা উন্মোচিত করছে।

ক্যারিয়ারবিল্ডার নামে একটি নিয়োগ সংস্থার জরিপ মতে, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৭০ ভাগ কোম্পানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশ্লেষণ করে চাকরি প্রার্থীদের বাছাই করে। আর ৪৮% কোম্পানি তাদের বর্তমান কর্মকর্তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড নজর রাখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের।

বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে সবার আগে গ্রহীতার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইল আগে ঘেঁটে নিচ্ছেন।

এরই মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কোম্পানি, ক্রেতাদের ক্রয় অভ্যাস আর রাজনৈতিক মতাদর্শের ধারণা নিয়ে থাকে সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল ঘেঁটেই। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারও সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

এ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের প্রোফাইল ডিলিট বা মুছে ফেলা। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর অনেকেই এ কাজটি করেছিলেন। ওই ঘটনায় ৮ কোটি ৭০ লাখের মতো মানুষের ফেসবুকের তথ্য রাজনৈতিকভাবে  সুবিধার জন্য গোপনে ব্যবহার করা হয়েছিল।

ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলার অন্যতম একটি উপায় যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ডিলিট করা তারপরেও এটি করে অন্যান্য কোম্পানির হাতে থাকা তথ্যের মুছে ফেলার সম্ভব নয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাধারণ তথ্য সুরক্ষা নীতি অনুযায়ী, ‘রাইট টু বি ফরগটেন বা বিস্মৃত হওয়ার অধিকার’ রয়েছে- অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি চাইলে তার নিজের ব্যক্তিগত তথ্য মুছে ফেলতে পারেন।

যুক্তরাজ্যে এই বিষয়টি দেখে থাকে তথ্য কমিশনারের কার্যালয়। বিবিসিকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নিজের সব তথ্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে মুছে ফেলার ৫৪১টি আবেদন জমা পড়েছে। যে সংখ্যা এর আগের বছর ছিলো ৪২৫ টি এবং ২০১৬-১৭ সালে ছিলো ৩০৩টি।

তবে ব্রিটিশ তথ্য কমিশনারের কার্যালয় (আইসিও) দাবি করে, এই প্রকৃত সংখ্যা আসলে আরও বেশি। কারণ, ওই সব আবেদনের বিষয়েই তালিকায় উল্লেখ করা হয়, যেগুলোর তথ্য মুছে ফেলতে অসম্মতি জানানোর পর এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

আইসিওর কর্মকর্তা সুজান গর্ডন বলেন, এটা আসলে পরিষ্কারভাবে বলা যায় না। কেউ যদি মনে করে যে কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা তার সম্পর্কিত কোন তথ্য আর কাজে লাগবে না, তখন সে তার ওই তথ্য মুছে ফেলার অধিকারকে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে জিডিপিআর।

সৌভাগ্যবশত, বিশ্বের অনেক দেশে এ বিষয়ে সহায়তার জন্য নানা আইন রয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশে তা এখনো কল্পনাতীত। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে তথা নিজেদের তথ্য নিজেরাই বেহাত হতে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের বাড়তি সতর্ক হতে হবে।

Comment here