ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : সরকার ও তার নির্বাচন কমিশন পৌর নির্বাচনের সকল কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের একতরফা ব্যবস্থা নিয়ে ডিজিটাল কারচুপির নতুন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রোগ্রামিংয়ে কারসাজি করে নির্বাচনে পূর্ব নির্ধারিত ফলাফলে তাদের (আওয়ামী লীগ) প্রার্থীকে তারা নির্বাচিত করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। স্থানীয় সরকারের পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল বিএনপি ‘প্রত্যাখ্যান করেছে’ বলেও তিনি জানান।
ফখরুল বলেন, ‘ইভিএম ভোটার-বান্ধব কোনো পদ্ধতি নয়। প্রোগ্রামে ঠিক করা ধানের শীষ, চলে যাবে নৌকায়। আবার দেখা যায় ১০বার ভোট দেওয়া হলে সেখান থেকে ৮টা ভোটই চলে যায় নৌকায়। ইভিএমের যে বোতামই টেপা হোক না কেন ফলাফল কিন্তু আগের ঠিক করা স্থানে যাবে। এটাতো নির্বাচনই হয়নি, মাপকাঠি আবার কিসের? এ সরকারের আমলে এই নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় কখনোই কোন সুষ্ঠু নির্বাচত হতে পারে না। আমরা একটাও বর্জন করিনি, আমরা দুটো বাদ দিয়ে সবগুলোর ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি।’
আজ মঙ্গলবার সকালে কালিবাড়ী তাঁতীপাড়াস্থ নিজ বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এ সব কথা বলেন। ইভিএম ও নির্বাচন ব্যবস্থার বিকল্প সম্পর্কে ফখরুল বলেন, ‘আমরা চাই নিরপেক্ষ একজন নির্বাচন কমিশনার সেই সাথে ইবিএম বাতিল করে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান।’
ইভিএম ব্যবহার না করার যৌক্তিকতায় তিনি বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার নিশ্চয়ই ভোটারদের জন্য সহজ এবং বোধগম্য কোনো পদ্ধতি নয়। আমাদের সহজ সরল ভোটারগণ ইভিএমের মতো জটিল প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত নয় এবং সেভাবে যথাযথ প্রশিক্ষণও পায়নি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী শাসন ও ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য আমলাদের তারা তুষ্ট করছে। যার ফলে রাজনীতিবিদরা পেছনে চলে যায়। আমলাদের উপর নির্ভরতা সে আইয়ুব খান আমল থেকে শুরু করে এরশাদের আমলেও হয়ে এসেছে এবং দুর্ভাগ্যবশত বর্তমান আওয়ামী লীগের আমলেও এমনটি হচ্ছে। যে আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে জনগণের দল হিসেবে পরিচয় দেয়, স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বলে দাবি করে; সেই আওয়ামী লীগ আজ জনবিচ্ছিন্ন এবং লুটপাটের দলে পরিণত হয়েছে।’
প্রথম ধাপের পৌর নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘স্থানীয় সরকার কখনও কোনো সরকার পরিবর্তন করে না। কিন্তু সেখানেও তারা শক্তি প্রয়োগ করে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ইলেকশন কমিশনারের যোগসাজশে তারা স্থানীয় সরকারের আসন গুলোকে দখল করে নিয়ে গেছে।’
২০২০ সালে বিএনপির অর্জন ও ২০২১ সালে বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ কী- এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিদায়ী বছর শুধু বিএনপির জন্য নয়, পুরো পৃথিবীর মানুষের জন্য ছিল খারাপ। আমাদের জন্য খারাপ দুটো কারণে প্রধানত, এই বছরই সরকারের কর্তৃত্ববাদের যে চেহেরা সেটা প্রচণ্ডভাবে সামনে এসেছে। সাংবাদিকদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সত্য লেখার জন্য, ডিজিটাল আইনে অনেক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধর্ষণ এই বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, দুর্নীতি এই বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে; আর জনগণের অধিকার হরণও এই বছরে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।’
ঠাকুরগাঁও বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিনসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে বেলা ১১টার দিকে বিএনপির মহাসচিব ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন।
Comment here