ইয়াবাকারবারি বাঁচাতে দুই কর্তার ‘লড়াই’ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
ঢাকাসমগ্র বাংলা

ইয়াবাকারবারি বাঁচাতে দুই কর্তার ‘লড়াই’

হাবিব রহমান : স্থানীয় ইয়াবাকারবারিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ দুই পুলিশ কর্মকর্তার। নিয়মিত মাসোহারাও নেন। এমনকি পুলিশের একটি মোটরসাইকেল থাকত ইয়াবাকারবারিদের কাছে। ওই বাইক ইয়াবা কারবারে ব্যবহার হতো। সম্প্রতি এক পুলিশ কর্মকর্তা অন্য কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ ইয়াবাকারবারিকে থানায় এনে ৯০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেন।

প্রতিশোধ নিতে এ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ আরেক ইয়াবা কারবারিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেন অন্য পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের কাছে পাওয়া ৫০০ পিস ইয়াবার মধ্যে মাত্র ২০টি উদ্ধার তালিকায় দেখানো হয়। ওই দুই ইয়াবাকারবারির কাছে মেলে থানার এক কনস্টেবলের মোটরসাইকেল। তবে তাকে বাঁচাতে মোটরসাইকেলটি জব্দ তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।

এ একবারই নয়, এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগেও ঘনিষ্ঠ মাদককারবারিদের গ্রেপ্তার করা নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ান ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। আমাদের সময়ের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানার এ চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আমাদের সময়ের হাতে আসা ঘটনার সময়কার পুলিশ কর্মকর্তাদের ভিডিও ক্লিপ, অডিও রেকর্ড ও অন্যান্য নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রায়পুর থানার এএসআই সুমন চৌধুরী ফোর্স নিয়ে রফিকুল ইসলাম নামে স্থানীয় একজন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন। রফিক একই থানার অন্য এএসআই সবুজ মিয়ার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি তাকে (রফিক) গ্রেপ্তার না দেখাতে অনুরোধ করেন।

কিন্তু অনুরোধ না রাখায় এর এক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা অভিযানে নামেন এএসআই সবুজ। ৫৫ পিস ইয়াবাসহ ওয়াহাব নামে এক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন। এ নিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে শুরু হয় বাগবিত-া। পরে ওসি তোতা মিয়ার মধ্যস্থতায় বিষয়টির সুরাহা হয়। তখন ওসির মীমাংসার শর্ত অনুযায়ী দুই মাদক কারবারিকেই সন্দেহভাজন হিসেবে সাধারণ মামলায় চালান দেওয়া হয়। পরে তারা জামিনে মুক্ত হন।

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি এএসআই সুমন রায়পুর পৌর এলাকার চিহ্নিত মাদককারবারি সজীবকে ধরে থানায় নিয়ে আসেন। পরে এএসআই সবুজের আরেক ঘনিষ্ঠজন চিহ্নিত মাদককারবারি মাইকেলকে ধরিয়ে দিতে সজীবকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখান এএসআই সুমন। তবে মাইকেলের বাড়িতে অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। কারণ মাইকেলকে বিষয়টি ফোনে জানিয়ে দেন এএসআই সবুজ। পরে ৯০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ওইদিন রাত ২টার দিকে সজীবকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ইয়াবাকারবারি সজীবের পরিবারের এক সদস্য আমাদের সময়কে বলেন, থানায় গিয়ে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে আমরা সজীবকে ছাড়িয়ে আনি।

এদিকে মাইকেলকে গ্রেপ্তার তৎপরতায় ক্ষুব্ধ হন এএসআই সবুজ। পরদিন ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ইয়াবাকারবারি সজীব ও কিরণকে ৫০০ পিস ইয়াবা এবং মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার করেন তিনি। গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, উদ্ধার মোটরসাইকেলটি রায়পুর থানার কনস্টেবল এমরানের। এ ছাড়া, গ্রেপ্তার দুই মাদক কারবারির একজন কিরণ আবার এএসআই সুমনের ঘনিষ্ঠজন। এ নিয়ে এএসআই সুমন ও এএসআই সবুজের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। এএসআই সুমন কিরণকে ছেড়ে দিতে চাপ দেন। কিন্তু তাতে রাজি হচ্ছিলেন না এএসআই সবুজ। এবারও ওসি তোতা মিয়ার হস্তক্ষেপে সমাধান হয়। তিনি কনস্টেবল ইমরানের মোটরসাইকেল বাদ দিয়ে মামলার জব্দ তালিকা করার নির্দেশ দেন। প্রথমে এসআই কুদ্দুসকে মামলার বাদী হতে বলা হলেও ঝামেলার কারণে তিনি এড়িয়ে যান। পরে এসআই মানিক ৫০০ পিস ইয়াবার মধ্যে থেকে সজীবকে মাত্র ১১ পিস ও কিরণকে ৯ পিস ইয়াবা দিয়ে মামলা দায়ের করেন।

থানার একাধিক পুলিশ সদস্য এই প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি নিয়ে দু’পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। সব জেনেও তাদের বিরুদ্ধে আইনি কোনো ব্যবস্থা নেননি ওসি।

অভিযোগের বিষয়ে এএসআই সুমন চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। ফোন না করে আপনি আমার সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে পারতেন। তবে অনেক চেষ্টা করেও অভিযুক্ত আরেক এএসআই সবুজ মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হলেও সাড়া দেননি তিনি।

রায়পুর থানার ওসি তোতা মিয়া বলেন, যেভাবে অভিযান হয়েছে সেভাবেই মামলা হয়েছে। এর বাইরে কিছু হয়নি। লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনা সত্য হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comment here