নিজস্ব প্রতিবেদক :পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। আজ রোববার নয়াপল্টনে দলের পক্ষ থেকে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ, বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করুন এবং বিলম্ব না করে পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক। এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’
আত্মপ্রচারে নিমগ্ন সরকারের চরম ব্যর্থতা, লুটপাট, উদাসীনতা, অদূরদর্শিতা আর খামখেয়ালিপনার কারণে দেশের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী। তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান স্বীকার করেছেন, দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ১০ জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত। ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন ভয়ংকর বন্যা আর হয়নি। বন্যাকবলিত অঞ্চলে গবাদি পশু ভেসে যাচ্ছে, ঘরবাড়িসহ সব জিনিস নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সব হারিয়ে মানুষ এখন সর্বশান্ত। ত্রাণের জন্য গোটা বন্যাদুর্গত এলাকা হাহাকার করছে। সিলেট এবং সুনামগঞ্জে শুকনো মাটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে দেশে বজ্রপাত, বন্যা ও ভূমিধসে গত দুই দিনে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ’
তিনি আরও বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট, নেই পয়:নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। মানুষ হাহাকার করছে। এমন মহাদুর্যোগে সরকার মহাদুর্নীতির এপিটাফ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের উৎসব আনন্দে আত্মহারা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পদ্মার দুই প্রান্তের সমাবেশে লাখ লাখ লোক জমায়েত ঘটাতে। কয়েক হাজার বাস রিকুইজিশন করা হয়েছে। ৩শ লঞ্চ রিকুইজিশন করা হয়েছে। জনসভাস্থলে ৫০০ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। যারা উৎসবে অংশ নিতে অনীহা দেখাবে তাদেরকে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। দুই প্রান্তে থানা করা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।
এখানেই থেমে নেই উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের সংবাদপত্র এবং সকল মিডিয়াকে সরকার লিখিতভাবে ফরমান জারি করেছে প্রতিদিন পদ্মা সেতু নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। মৌখিকভাবে বলা হয়েছে কেউ নিয়মিত ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ না করলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়া হবে। তাদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রিজভী বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবের নামে শত শত কোটি টাকা উড়ানো হচ্ছে। অথচ সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা ও উত্তরাঞ্চলসহ বন্যাকবলিত এলাকা সমূহে প্রায় কোটি পানিবন্দী মানুষের সাহায্যের জন্য সরকারি বরাদ্দ একেবারেই অপ্রতুল। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জনসভাস্থলে অস্থায়ী ৫০০ টয়লেট স্থাপন করতে যে খরচ হবে তার দশ ভাগের এক ভাগও বরাদ্দ পায়নি বন্যার্তরা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে স্ব স্ব জেলার নেতাদের বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান রিজভী। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে সিলেট মহানগর, সিলেট জেলা, হবিগঞ্জ জেলা, সুনামগঞ্জ জেলা, নেত্রকোণা জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে কাজ করে যাচ্ছে। তারা স্যালো নৌকা ও ট্রলার দিয়ে দুর্গত এলাকার লোকজনদের নিরাপদ স্থলে আনতে সহযোগিতা শুরু করেছে। বন্যার্তদের মাঝে বিএনপির পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
Comment here