এক ‘বিশৃঙ্খলায়’ পদ গেল বিএনপির ১৪ নেতার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

এক ‘বিশৃঙ্খলায়’ পদ গেল বিএনপির ১৪ নেতার

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ওয়ার্ড সম্মেলনে ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টির অভিযোগে স্থানীয় ১৪ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ রোববার তাদের বহিষ্কার করা হয় বলে মহানগর উত্তরের শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা জানান। ওই নেতা আরও জানান, উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক এই বহিষ্কারাদেশ অনুমোদন দিয়েছেন।

এদিকে, একই ঘটনায় দলের অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের আরও ১২ থেকে ১৪ জন নেতাকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের চিঠিও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের মাধ্যমে যেকোনো সময় দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

বহিষ্কার হওয়া দুই নেতা ঘটনার বর্ণনা করে আমাদের সময়কে বলেন, উত্তরা-৭ নম্বর সেক্টরে বিএনপি নেতা আজমল হুদা মিঠুর বাসায় গত ৫ জুন ছিল পূর্বনির্ধারিত উত্তরা পশ্চিম জোনের সাংগঠনিক ওয়ার্ড ১, ৫১ এবং বিমানবন্দর সাংগঠনিক ওয়ার্ড সম্মেলন। ওই সম্মেলনের বেশ কয়েকদিন আগেই একতরফা ওয়ার্ডসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিটের কমিটি গঠন এবং কাউন্সিল করার ব্যাপারে অভিযোগ তুলে ধরে সব পক্ষকে সমন্বয় করতে বলা হয়েছিল। মহানগর উত্তরের নেতারা তা আমলে নেননি।

নেতারা বলেন, ক্ষুব্ধ কয়েকশ নেতাকর্মী ওই ঘটনার নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ করে সেদিন স্লোগান দিয়েছিল। ওই সময় মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক সেখানে উপস্থিত হন। প্রতিবাদের মুখে আমিনুল হক চলে যেতে চাইলে নেতাকর্মীরা আমিনুল হকের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়ে প্রতিবাদ করেন। সেখানে কোনো নেতাকর্মী আমিনুলের গাড়িতেও স্পর্শ করেনি।

সেদিন ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন উত্তরা পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল হৃদয়। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা মেনে রাজনীতি করি। কাউকে বাদ দিয়ে নয়; সবাইকে নিয়ে রাজনীতিতে বিশ্বাসী তিনি। কিন্তু উত্তরাতে যা হয়েছে তা একতরফা হয়েছে। আমরা কয়েক’শ নেতাকর্মী উপস্থিত হয়ে সমন্বয় করতে বলেছিলাম। সেখানে আমিনুল ভাইয়ের সঙ্গে কেউ কোনো অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের মাধ্যমে তদন্ত করে সঠিক তথ্য জানতে পারলে তিনি বিগত আন্দোলন সংগ্রামে আমাদের ভূমিকার কারণে বহিষ্কার নয়; পুরুষ্কৃত করবেন।’

এদিকে, ওই ঘটনায় উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। যদিও তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বহিষ্কৃত নেতারা।

তদন্ত কমিটির একজন সদস্য আমাদের সময়কে জানান, তারা ২৭ জনকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছেন। এদের মধ্যে ১৪ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার হওয়া নেতারা হলেন, উত্তরা পশ্চিম থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খোকন, সদস্য জাকির হোসেন, ৫১ নং ওয়ার্ডের সাবেক আহ্বায়ক মনসুর আহম্মেদ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ হোসেন জাহাঙ্গীর, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, বিমানবন্দর থানা বিএনপির নেতা এস এম নুরুল ইসলাম নুরু, দক্ষিণ খান থানার ৪৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহম্মেদ, ৪৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বিল্লাল হোসেন বিজয়,  ৪৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাওসার আহম্মেদ রনি, বিমান বন্দর থানা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট শফিক ও সাবেক নেতা জালাল, উত্তরা পূর্ব থানা ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইমরান মাহমুদ ও উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সাবেক নেতা মিজান পাটোয়ারী ।

বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা বলেন, ঢাকা-১৮ আসনের গত উপনির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে উত্তরা নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়ে। সেই বিভক্তি এই বহিষ্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এখানে দলের প্রভাবশালী একজন নেতাকে খুশি করতে গিয়ে এসব ঘটনা ঘটেছে। অতএব এখানে স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ঘটনার নেপথে গিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে। দলের যেসব নেতা ভবিষ্যতে ঢাকা-১৮ আসনে জাতীয় নির্বাচন করতে চান তাদের দ্বন্দ্বের কারণেই এই বিভাজন। এক পক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করতে তৃণমূল নেতারা বহিষ্কার হচ্ছেন। বিষয়টি তারেক রহমানের দেখা উচিত।

 

Comment here