এক ভয়াবহ দৈত্য দেশের সব কিছু তছনছ করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপিপন্থি অংশের সাংবাদিকদের সংগঠন ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে ইফতার মাহফিলের পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী বা কোনো ব্যক্তি নয়- গোটা জাতি একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। সাবেক একজন প্রধান বিচারপতি তার বইয়ের মধ্যে লিখেছেন, তার রায়ের মধ্যে বলেছেন একজন মনোস্টার সবকিছু দখল করে ফেলছে এবং সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে। আজকে ব্যাপারটা সেটাই হয়েছে। একটা ভয়াবহ দৈত্য, সে সমস্ত আক্রশ নিয়ে গোটা বাংলাদেশকে তচনছ করে ফেলছে। আসলে আজকে ব্যাপারটা সেটাই হয়েছে। একজন ভয়াবহ দৈত্য সমস্ত আক্রোশ নিয়ে পুরো বাংলাদেশকে তছনছ করে ফেলছে। গত ১৫ বছরের মধ্যে যখন গণতন্ত্রকে হারিয়েছি সেই সময় থেকে রাষ্ট্রের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।’
দেশের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে বিরোধীদলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন যাওয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একদফায় আমরা বিরোধী রাজনৈতিক দল ও বাম রাজনৈতিক দল সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে আমরা সংগ্রাম শুরু করেছি। ২৮ অক্টোবরে আমাদের যে মহাসমাবেশ (নয়াপল্টন) সেখানে পুলিশ নির্লজ্জভাবে ঢুকে পণ্ড করে দিয়েছে। অনেকে ভাবতে পারে বিএনপির আন্দোলনে নস্যাৎ হয়ে গেছে, বিরোধীদলের আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু কখনো মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয় না বরং প্রতিটি আন্দোলনের পরে আরও শক্তিশালী হয়েছে এই শক্তিগুলো। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন।’
গণমাধ্যমের ওপর সরকারের দমননীতির কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘আমরা যাদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রাখি-সেই গণমাধ্যমের ওপরে সবচেয়ে আগে আঘাত করা হয়েছে। অনেক পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছে। যারা সত্য লেখেন, যারা লিখতে চান, লিখতে পারেন তাদের সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট থেকে শুরু করে ডিজিটাল আইনে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এমনকি নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়।’
ফ্যাসিবাদ যখন শক্তিশালী হয় তখন কেউই রেহাই পায় না উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জার্মানির হিটলার যখন এক এক করে হত্যা করা শুরু করেছিল- তখন একজন বলেছিলেন, ‘‘এখন তো আমাদের নিচ্ছে না, ইহুদিদের নিচ্ছে’’। এরপর যখন কমিউনিস্টদের নিয়ে যাচ্ছিল তখন সাংবাদিকরা বললেন, ‘‘আমাদের তো নিচ্ছে না, কমিউনিস্টদের নিচ্ছে’’। এক সময় দেখা গেল সাংবাদিকদেরও তুলে নেওয়া হয়। বাংলাদেশেও সেই একই অবস্থা চলছে।এটা আর রাষ্ট্র আছে বলে মনে হয় না, এটা মনে হয় না এটা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র। আমার মনে হয়, একটা পুরোপুরিভাবে আধিপত্যবাদ, একটা নির্মম ফ্যাসিবাদ আমাদের ওপর চেপে বসেছে।’
প্যালেস্টাইনের গাজায় ইসরাইলী বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই রমজান মাসেও ইসরাইলের নারকীয় গণহত্যার শিকার হয়েছে প্যালেস্টাইনের ভাইবোনেরা। এই রমজান মাসে তারা খোলা আকাশে ইফতার করছে, কাঁদছে, খাদ্য পাচ্ছে না সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। কত নৃশংস হতে পারে তারা যাতে বাঁচতে থাকতে না পারে সেজন্য সেখানে খাদ্য সরবারহ বন্ধ করে দিয়েছে।’
ব্যাংক বীমা, নির্বাচন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব প্রতিষ্ঠান এই ফ্যাসিবাদী সরকার ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই অবস্থায় বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় ঐক্য আরও সুদৃঢ়ভাবে গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্যদিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’
ইফতার মাহফিলে অংশ নেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা আবদুস সালাম, আবদুল হাই শিকদার, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, রফিকুল আলম মজনু, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জামায়াতের রফিকুল ইসলাম খান, আবদুল হালিম, মতিউর রহমান আকন্দ, খেলাফত মজলিসের আহমেদ আবদুল কাদের প্রমুখ।
Comment here