নিজস্ব প্রতিবেদক : এবার পুলিশ সুপারের (এসপি) উদ্যোগে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীর আরেক যৌনকর্মীর জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে রাজবাড়ীর এসপি মো. মিজানুর রহমানের উদ্যোগে রিনা বেগম (৫৫) নামে ওই যৌনকর্মীর জানাজা হয়।
গোয়ালন্দ থানা জামে মসজিদের ইমাম আবু বক্কর সিদ্দিক এ জানাজা পড়ান। পরে তাকে পল্লীর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানা গেছে, গতকাল বিকেলে যৌনকর্মী রিনা বেগম মারা যান। পরে বিষয়টি রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জানতে পারলে তাৎক্ষণিক তিনি ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী ওই যৌনকর্মীর জানাজা পড়ানোর উদ্যোগ নেন।
কিন্তু যৌনকর্মী বলে স্থানীয় কোনো ইমাম তার জানাজা পড়াতে রাজি হননি। তাই গোয়ালন্দ ঘাট থানা মসজিদের ইমামকে সঙ্গে নিয়ে তার জানাজা পড়ানোর ব্যবস্থা করেন পুলিশ সুপার।
এতে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাহ উদ্দিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন, গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান ও দৌলতদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডলসহ এলাকাবাসী।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আমার স্বপ্ন ছিল, যা আজ পুলিশের চেষ্টায় বাস্তবে পূর্ণতা পেয়েছে। এতে আমি অনেক খুশি। এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে সে জন্য পুলিশ সুপারকে অনুরোধ জানাই।’
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান, আল্লাহ ক্ষমাশীল। একজন মানুষের শেষযাত্রায় সামাজিক কারণে যদি জানাজা না দেই, তাহলে মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি অবিচার করা হবে। সেই আলোকে প্রথম যৌনকর্মীর জানাজা শেষে আজ দ্বিতীয় যৌনকর্মীর জানাজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কোনো যৌনকর্মীর জানাজা পড়ানোর মাধ্যমে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান।
দেশের বৃহৎ পতিতাপল্লী হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া। এখানে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার বাসিন্দার বসবাস এবং যৌনকর্মীর সংখ্যা প্রায় ১২শ। যৌনকর্মী বা পতিতাপল্লীর বাসিন্দা বলে এদের মৃত্যুর পর কোনো ইমাম জানাজা পড়াতে রাজি হন না। যে কারণে মৃত্যুর পর তাদের কলসি বেঁধে পদ্মায় ডুবিয়ে অথবা মাটিচাপা দিয়ে সৎকার করা হতো।
সেই প্রথা ভেঙে প্রথমবারের মতো হামিদা বেগম (৬৫) নামে এক প্রবীণ যৌনকর্মীর জানাজার ব্যবস্থা করেন ওসি আশিকুর রহমান।
Comment here