কতটা কষ্ট করে এতদূর এসেছে আকবর, জানালেন বাবা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
রংপুরসমগ্র বাংলা

কতটা কষ্ট করে এতদূর এসেছে আকবর, জানালেন বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক,রংপুর : শোককে শক্তিতে পরিণত করে বিশ্বজয়ের গল্প লিখেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলী। বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের খেলা চলাকালীন (২২ জানুয়ারি) হারান প্রাণপ্রিয় বোনকে। পরিবারের তরফ থেকে তাকে এ খবর জানানো হয়নি, যদি না তিনি ভেঙে পড়েন! কিন্তু তারপরও বোনের মৃত্যুর খবর ঠিকই জেনেছেন আকবর।

মেয়েকে হারিয়েও ছেলের অর্জনে গর্বে বুক চিতিয়েছেন আকবরের বাবা মোস্তফা মিয়া। তবে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে (বিকেএসপি)। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘বিকেএসপি যদি সহায়তা না করতো তাহলে আকবর আলী আজ ক্রিকেটার হতে পারত না।’

আজ সোমবার দুপুরে রংপুর নগরীর নিউ জুম্মাপাড়ায় আকবরের বাড়ি গিয়ে কথা হয় তার বাবা-মা ও বড়ভাই মুরাদের সঙ্গে। তখন মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘বিকেএসপিতে আকবরের লেখাপড়ার খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য ছিল না আমার। ক্লাস সেভেনে বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে ভালো ফলাফল করে সে। তখন বিএকেএসপি তার লেখাপড়ার খরচ ফ্রি করে দেয়। সেখান থেকে বিনা পয়সায় ইন্টারমেডিয়েট পাস করে আমার ছেলে।’

বর্তমানে ঢাকায় আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে বিশ্বকাপ জেতা আকবর। ছেলের ব্যাপারে বাবা আরও বলেন, ‘আকবর খুব কষ্ট করে এত দূর এগিয়েছে। আমার কাছে টাকা পয়সার জন্য কখনো আবদার করেনি। নিজের খরচ নিজে চালিয়েছে। এসএসসিতে এ-প্লাস নিয়ে পাস করে আকবর।’

২৪ জানুয়ারি আকবরের পরিবারের সবচেয়ে খারাপ দিন ছিল। কারণ মোস্তফা হারিয়েছিলেন একমাত্র মেয়ে আর আকবর তার ভালোবাসার বোনকে। সেদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি ভেসে যায় বৃষ্টিতে। গুরুত্বপূর্ণ খেলা, তাই আকবরকে এই মৃত্যুর খবর জানায়নি পরিবার। কিন্তু হৃদয়ের টান বলেই হয়তো অন্য মাধ্যমে বোনের মৃত্যুর খবরটি জেনেছেন তিনি।

গত ১৮ জানুয়ারি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আকবরদের খেলা টিভিতে দেখেছিলেন তার বোন খাদিজা, এর চার দিনের মাথায় তিনি মারা যান জমজ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে। বোন মারা যাওয়ার পরই বাংলাদেশের নকআউট পর্বের খেলা শুরু হয়েছিল। অর্থাৎ হারলেই বাদ। আকবর হয়তো বুঝে গিয়েছিলেন তার কাঁধে যেহেতু বাংলাদেশের নেতৃত্ব, ভেঙে পড়লে চলবে না। কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।

সেই শোককেই শক্তিতে রুপান্তর করেন আকবর। ফাইনালে কঠিন চাপ কাটিয়ে অপরাজিত ৪৩ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস গড়ে ভারতের চরকা ভেঙে দেশকে এনে দেন প্রথম বিশ্বকাপ।

আকবরের ফার্নিচার ব্যবসায়ী বাবা ছেলের অর্জনের পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান দেখতে পান। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। পাশপাশি আকবর একদিন জাতীয় দলের টেস্ট ও ওয়ানডে দলে জায়গা করে নেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মেয়ে হারানোর শোকে এখনো কাতর আকবরের মা সাহিদা বেগম। রানীর (আকবরের বোন) জমজ নবজাতক বর্তমানে তার কাছেই আছে। কষ্টের মাঝেও ছেলের অর্জনে আনন্দিত তিনি। আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমার বড় ছেলে মুরাদও ক্রিকেট খেলত। সে বেশিদূর না গেলেও আকবরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। আল্লাহ আমার স্বপ্নপূরণ করেছেন।’

চার ভাই, এক বোনের মধ্যে সবার ছোট আকবর আলী। তার বড়ভাই মুরাদ হোসেনও ঢাকা লিগে খেলতেন। তবে ২০১৭ সালে তিনি খেলা ছেড়ে দেন। নিজে সরে আসলেও ছোটভাইয়ের খেলার প্রতি তার মনোযোগ ছিল প্রবল। আমাদের সময়কে তিনি বলেন, ‘আকবর ছোটবেলা থেকেই ভালো ক্যাপ্টেন্সি করতো। ওকে নিয়ে আশা ছিল, পূরণ করেছে। আকবর জাতীয় দল ও টেস্ট দলে সুযোগ পেলে আমাদের স্বপ্ন আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।’

আকবরের এই অর্জনে আনন্দে উদ্বেলিত তার এককালের কোচ ক্রিকেটার অঞ্জন সরকার। হাতে খড়ি থেকে আজ তার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিশাল জয়ে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনি।

Comment here