হারুন-অর-রশিদ : করোনার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে আজ উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ব্যয়ের হিসাব অনেক বড় হলেও বাজেটে আয়ের উৎস সংকুচিত। এ জন্য বড় অঙ্কের ঘাটতি রেখে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর চাপ আগের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে দ্বিগুণ। অন্যদিকে দেশীয় অন্যতম উৎস সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা কমানো হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রায় ১ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রেখে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হচ্ছে নতুন অর্থবছরের জন্য। ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহণে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু করোনার কারণে রাজস্ব আদায়ে ধস নামায় ৩১ মে পর্যন্ত সরকার ইতোমধ্যে ৬৪ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। সংশোধিত বাজেটে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বছরের নতুন বাজেট এবং সংশোধিত বাজেটে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের রাজস্ব আয় কমেছে। আবার করের হার বৃদ্ধি এবং আইনকানুন কঠোর করায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যও কমিয়ে এনেছে। ফলে সরকারের এখন একটাই পথÑ ব্যাংকঋণ। আর সেটাই করছে। এ ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই।
বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নে দেশি আরেকটি বড় উৎস সঞ্চয়পত্র বিক্রি। সঞ্চয়পত্রে সরকার বেশি সুদ প্রদান করে। কালো টাকার মালিকরা সঞ্চয়পত্র কিনে বেশি সুবিধা ভোগ করছেন। তাই সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কিছু শর্তারোপ করেছে সরকার। এ জন্য বিক্রিও অনেক কমে গেছে। এর মধ্যে নতুন অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২০ হাজার কোটি ্টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ২৭ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে সেভাবে বিক্রি না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ৭ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যেখানে ৩০ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল। সব মিলিয়ে সঞ্চয়পত্রে জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। বিপুল অঙ্কের এই ঋণের বিপরীতে সরকারকে ১১ শতাংশের বেশি সুদ গুনতে হচ্ছে। সঞ্চয়পত্রে বিপুল অঙ্কের এ দায়ের বিপরীতে চলতি অর্থবছরে সব মিলিয়ে সরকারকে ৬৯ লাখ টাকার সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হবে। সুদ ব্যয় কমাতে গিয়ে সরকার সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের একক সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এছাড়া এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক, সঞ্চয়পত্রের সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে করাসহ নানা বিধান করা হয়েছে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা খুব বেশি নয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তা অর্জিত হবে কিনা, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। এদিকে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেওয়া হচ্ছেÑ এটি গ্রহণযোগ্য নয়। এমনিতেই অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে আছে, ব্যাংকগুলোর আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে এবং খেলাপি ঋণ ক্রমে বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ আরও কমে যাবে। তখন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়ে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সবই বাধাগ্রস্ত হবে।
Comment here