কমলাপুর স্টেশন ভাঙা হচ্ছে না - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

কমলাপুর স্টেশন ভাঙা হচ্ছে না

তাওহীদুল ইসলাম : আপাতত কমলাপুর স্টেশন ভাঙার আশঙ্কা নেই। প্রথমে মেট্রোরেল এবং পরবর্তী সময়ে মাল্টিমোডাল হাবের কারণ দেখিয়ে স্টেশন ভবনটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন রেল কর্তৃপক্ষ মনে করছে, কমলাপুর স্টেশনটি আপাতত ভাঙার দরকার নেই। ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর স্টেশন ভাঙার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার এ তথ্য গতকাল নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

কমলাপুর স্টেশনে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ করা হবে বাণিজ্যিক বিবেচনা ও যাত্রী পরিবহনের সুবিধার্থে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ ও এমআরটি-১ থাকছে এ কমলাপুর স্টেশনকে কেন্দ্র করেই। রেলওয়ের হাইস্পিড ট্রেনও থাকবে সেখানে। এ জন্য হোটেলসহ বাণিজ্যিক কেন্দ্র নির্মাণে হাব করবে রেল। কর্তৃপক্ষের চিন্তা ছিল্ল- বিদ্যমান স্টেশন বিল্ডিংটি উত্তর দিকে স্থানান্তর করলে সব সেবা এক জায়গা থেকে মিলবে। তা ছাড়া স্টেশন ভবনটিও পুরনো হয়ে গেছে বলে মনে করছে তারা। তাই স্থানান্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে স্টেশনটি সরানো ছাড়া কমলাপুরে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণে বাধা নেই। এমনকি মেট্রোরেলের কারণেও প্রতিবন্ধকতা থাকছে না। ফলে এ মুহূর্তে স্টেশন না সরানোর সিদ্ধান্তই হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে সরানো হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এটি ৫ থেকে ১০ বছর পরও হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

কমলাপুর মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ করা হবে জাপানের অর্থায়নে। এই হাব নির্মাণের স্বার্থে স্টেশনটি সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এই হাবের সঙ্গে মেট্রোরেলেরও সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয় তখন। যদিও মেট্রোরেলের স্টেশনের অবস্থান কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর এ মুহূর্তে ভাঙা ছাড়াই হাব নির্মাণ করা যাবে- এমন মতামত পেয়ে আপাতত স্টেশন ভবনটি ভাঙতে চাইছে না রেলওয়ে। স্টেশন ভাঙার চিন্তার বিরোধিতা করে সাম্প্রতিক সমালোচনা সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে খানিকটা ভূমিকা রেখেছে।

কমলাপুর স্টেশন স্থানান্তরের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুষ্ঠিত সভায় গত ডিসেম্বরে বলা হয়েছে, মেট্রোরেলের এলিভেটেড কাঠামোর জন্য কমলাপুর স্টেশন যেন ঢেকে না যায়, সে জন্য মূল অংশ উত্তর দিকে স্থানান্তর করা যেতে পারে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কমলাপুর স্টেশনের মধ্যে দিয়ে যাবে, যা মাল্টিমোডাল হাবের পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাপানের সঙ্গে জিটুজি পদ্ধতিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) প্রকল্পগুলোর পর্যালোচনায় ওই সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, কমলাপুর স্টেশন বিল্ডিংয়ের আগে এমআরটি ৬-এর সিজর ক্রসিংয়ের স্থান সংকুলান করার জন্য এমআরটি ৬-এর প্ল্যানে স্টেশন বিল্ডিং উত্তর দিকে স্থানান্তর করা হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ডিএমটিসিএল সম্মত হয়েছে।

এদিকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, কমলাপুর স্টেশনের মূল ভবন থেকে ৩০ মিটার দূরে মেট্রোরেলের স্টেশন হবে। কমলাপুর স্টেশনের উচ্চতা ১৮ মিটার। মেট্রোরেলের স্টেশনের উচ্চতা হবে ২২ মিটার উঁচুতে। তাই মেট্রোরেলের স্টেশনের কারণে কমলাপুর স্টেশন আড়ালে পড়ার কারণ নেই। কমলাপুর স্টেশনের সামনে যে পার্কিং রয়েছে, তাতেও মেট্রোরেলের প্রভাব পড়বে না। কমলাপুর স্টেশন ভাঙার বিষয়টি রেলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

প্রকল্পের নথি সূত্রে জানা গেছে, মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব হাইস্পিড ট্রেন, মেট্রোরেল, পাতাল রেল এবং এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগস্থল হিসেবে কাজ করবে। এখান থেকে একজন যাত্রী ঢাকাসহ দেশের যে কোনো প্রান্তে যেতে পারবেন। মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব ঘিরে থাকবে হোটেল, বিনোদনকেন্দ্রসহ নানা বাণিজ্যিক স্থাপনা। জাপানের কাজিমা করপোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। একই সংস্থা বিমানবন্দর স্টেশনকেও ‘মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব’-এ রূপান্তরের দায়িত্ব পেয়েছে।

২০১৯ সালের ২১ মার্চ কাজিমা করপোরেশনের প্রকল্প ধারণাগত প্রস্তাব তৃতীয় বাংলাদেশ-জাপান পিপিপি সভায় অনুমোদন পায়। প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) চলতি মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

 

Comment here