বিবিসি বাংলা : বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিজেদের হাতে নেওয়ার পর ২৪ ঘণ্টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পুরোপুরি কাজ শুরু করতে পারেনি বলে জানা গেছে। কিন্তু রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কাছ থেকে পরীক্ষার দায়িত্ব সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যুক্তি হলো, আইইডিসিআর তাদের প্রধান কাজ অর্থ্যাৎ সারা দেশে ল্যাবগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ এবং সংক্রমণ পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার কাজও সঠিকভাবে হয়নি।
এসব বক্তব্যের বিষয়ে যুক্তি দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রগুলো বলেছে, গত সপ্তাহে আইইডিসিআর’র ল্যাব সংক্রমিত হয়েছিল এবং সেজন্য সেই ল্যাবে ২৪ ঘণ্টা পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হয়েছিল। আইইডিসিআর’র ল্যাবে কাজ করতে গিয়ে তাদের কয়েকজনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার কথাও বলা হচ্ছে।
আইইডিসিআর’র ল্যাবে কেন এমন সমস্যা হবে, সেই প্রশ্নও তোলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রগুলো।
তবে আইইডিসিআর-এর কর্মকর্তারা করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে তাদের ল্যাবে পরীক্ষা বন্ধ রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রগুলো জানিয়েছে, এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, এই পরিস্থিতিতে ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষার টার্গেট করা হচ্ছে। এই বড় অংকের নমুনা সংগ্রহ এবং দেখভালের দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা আইইডিসিআর-এর নেই বলে তারা মনে করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সেজন্য পরীক্ষা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এখন ৩১টি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছে। এই ল্যাবগুলোর মান দেখার দায়িত্ব আইইডিসিআর’র।’
তিনি বলেন, ‘তাদের আরও দায়িত্ব আছে। যেমন লক্ষণ ছাড়া অনেকের মৃত্যু হচ্ছে এবং পুলিশসহ অনেক পেশার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। কেন এটা হচ্ছে তা জানা দরকার। পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। আইইডিসিআর’র ম্যান্ডেট হলো এই কাজগুলো করা। তারা এখন সেই কাজ করবে। আমরা আলোচনা করেই এটা ঠিক করেছি।’
‘আইইডিসিআর-কে এখন রিসার্চ এবং রেফারেন্স ল্যাব করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন ল্যাবে যেসব পরীক্ষা হচ্ছে, সেগুলোর মান নিয়ে তারা এখন গবেষণা করবে’, বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
এ বিষয়ে আইইডিসিআর কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির শুরু থেকেই আইইডিসিআর সামনের সারিতে ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে পরীক্ষার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব থেকে তাদের কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারেরই কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ঈর্ষা থাকতে পারে।
এ ছাড়া এই সূত্রগুলো মনে করছে, যেহেতু লোকবল কম, সারা দেশে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরই লোকবল দিয়ে তাদের সাহায্য করছিল। ফলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সেটিও একটি কারণ বলে তাদের ধারণা।
যদিও আইইডিসিআর’র কর্মকর্তারা এতদিন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ মানতে রাজি নন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রগুলো বলেছে, আইইডিসিআর’র পক্ষ থেকে নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার কাজে বিলম্ব হওয়ার অনেক অভিযোগ আসে। সর্বশেষ তাদের ল্যাবে সমস্যা হওয়ায় ১ হাজার ৫০০ নমুনা পরীক্ষার জটে পড়ে গিয়েছিল। সেগুলো এখন বিভিন্ন ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক একজন পরিচালক ডা. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘পরীক্ষার ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী এবং হাসপাতালগুলোর ওপর আইইডিআর’র কর্তৃত্ব নেই। ফলে তারা আইইডিসিআর’র কথা সেভাবে গুরুত্ব না দেওয়ায় কাজের সমস্যা হয়।’
সেজন্য তারা বিশেষজ্ঞদের বেশ আগে প্রতিষ্ঠানটির এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি একটু দূরের দিকে তাকাতাম, তাহলে অনেক আগেই এরকম সিদ্ধান্ত দিতাম। এখন ঘাটতি যেটা হলো, আমাদের রোগতাত্ত্বিক নানা ধরনের বিশ্লেষণ হয়নি। ফলে সে ধরনের কোনো বিশ্লেষণ না থাকায় সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুাতেও সমস্যা হচ্ছে।’
Comment here