কাল থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে টোল - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

কাল থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে টোল

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে চলতে আগামীকাল শুক্রবার থেকে টোল দিতে হবে। অল্প দূরত্ব হলেও বেশি টোল দিতে হবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়েতে। দুর্ঘটনা রোধে এক্সপ্রেসওয়েতেও মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করতে প্রস্তাব করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।

এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ে গতকাল বুধবার ঠিকাদার কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন (কেইসি) সঙ্গে চুক্তি সই করেছে সওজ। চুক্তিতে নিজ পক্ষে সই করেন সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান ও কেইসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লি হিউং সান। কেইসি দক্ষিণ কোরিয়ায় চার হাজার কিলোমিটারের বেশি এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় করে।

সওজের হয়ে আগামী পাঁচ বছর টোল আদায়, এক্সপ্রেসওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ এবং ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) ইনস্টলেশন করবে কেইসি। তাদের সহযোগী হিসেবে রয়েছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটেল কমিউনিকেশন। পাঁচ বছরের জন্য তারা ৭১৭ কোটি টাকা নেবে। এর মধ্যে ভ্যাট ও আয়কর ২১৮ কোটি টাকা।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সওজের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মনির হোসেন পাঠান বলেন, সরকার অনুমোদন দিলে পদ্মা সেতুর মতো এক্সপ্রেসওয়েতেও মোটরসাইকেল চলবে না। তবে মোটরসাইকেল পাশের সার্ভিসে লেনে চলতে বাধা নেই। নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়েতে চলতে পারবে দ্বিচক্রযান।

এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধের যুক্তি দিয়ে সওজের প্রধান প্রকৌশলী মনির হোসেন পাঠান বলেন, একই লেনে বিভিন্ন গতির গাড়ি চললে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে এক্সপ্রেসওয়ে লেন পৃথক করা হয়েছে। বাংলাদেশে যাত্রী চালকের মানসিকতা উন্নত দেশের মতো নয়। মোটরসাইকেল তাই পৃথক লেনেই চলা উচিত। সারাদেশে মহাসড়কে সওজের ৪৬টি পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা রয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, মোটরসাইকেল দ্রুতগতির লেনে চলে আসছে। মোটরসাইকেল যত দ্রুত লেন পরিবর্তন করতে পারে, তা বড় গাড়ি পারে না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে।

এদিকে গতকাল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য অন্তর্বর্তী টোল নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে চলতে ট্রেইলারকে ১ হাজার ৬৯০, বড় ট্রাকে ১ হাজার ১০০, মাঝারি ট্রাকে ৫৫০, বড় বাসে ৪৯৫, মিনি ট্রাকে ৪১৫, মিনিবাসে ২৭৫, মাইক্রোবাসে ২২০, প্রাইভেট কারে ১৪০ এবং মোটরসাইকেলে ৩০ টাকা টোল দিতে হবে।

গত মঙ্গলবারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, নীতিমালা অনুযায়ী যথাসময়ে চূড়ান্ত টোল নির্ধারণ করা হবে। অন্যদিকে গতকাল হাইকোর্টকে সওজ জানিয়েছে, ১ জুলাই এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু হওয়ায় সেদিন থেকে আর এই সড়কের পোস্তগোলা, ধলেশ্বরী ও আড়িয়ালখাঁ সেতুতে আলাদা করে টোল দিতে হবে না।

গতকালের টোল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পুরো পথের হিসাব দেওয়া হলেও চুক্তি সই অনুষ্ঠানে ছয়টি এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্ট ধরে ধরে নির্দিষ্ট দূরত্বে টোলের হিসাব দেওয়া হয়। এ তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর জিরোপয়েন্ট এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ দিয়ে যানবাহন এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ ও বের হতে পারবে। পথিমধ্যে পদ্মা সেতুর এপারে কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুর, ধলেশ্বরী সেতু প্লাজা, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর এবং পদ্মা সেতুর ওপারে মাদারীপুরের পাচ্চর, মালিগ্রাম ও পুলিয়ায় এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্ট থাকবে।

ঢাকার জিরোপয়েন্ট থেকে পোস্তগোলা সেতু হয়ে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পথে একটি বড় বাসকে ৯০ টাকা টোল দিতে হবে। বাবুবাজার সেতু হয়ে ঝিলমিল থেকে কোনো বাস পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বের আবদুল্লাহপুর গেলেও একই পরিমাণ টোল দিতে হবে। আবদুল্লাহপুর থেকে ধলেশ্বরী টোল প্লাজার দূরত্ব তিন কিলোমিটার। কিন্তু বাস আবদুল্লাহপুর থেকে ঢুকে ধলেশ্বরী টোল প্লাজা অতিক্রম করলেই জিরোপয়েন্ট থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের শ্রীনগর পর্যন্ত পুরো ৩২ কিলোমিটারের ২৯০ টাকা টোল দিতে হবে। পদ্মা সেতুর ওপারে কোনো বাস পুলিয়া থেকে মালিগ্রাম চার কিলোমিটার পথ চললেও ধরা হবে, সেটি পদ্মা সেতুর পাচ্চর প্রান্ত থেকে চলেছে। পুরো ১৬ কিলোমিটারের জন্য ১৪৫ টাকা টোল দিতে হবে।

বর্তমানে পোস্তগোলায় ৪০, ধলেশ্বরীতে ১৮০ এবং আড়িয়াল খাঁতে ৯০ সহ মোট ৩১০ টাকা টোল দিতে হয় ৪০ আসনের বাসে। এই তিন টোলের বদলে এক্সপ্রেসওয়েতে দিতে হবে ৪৯৫ টাকা। ১৮৫ টাকা খরচ বাড়ছে। পদ্মা সেতুর টোল ২ হাজার। বন্ধের আগে ফেরিতে বাসের টোল ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকা। আগে ফেরি ও তিন সেতুতে টোল লাগত ১ হাজার ৬৬০। এখন লাগবে ২ হাজার ৪৯৫ টাকা। খরচ বাড়ছে ৮৩৫ টাকা।

প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘গাড়ি কেন এত অল্প দূরত্বে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যাবে? তাদের তিন-চার কিলোমিটার পথ চলতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সে কারণেই পুরো পথের টোল নেওয়া হবে।’ ১৮ ফুটের সার্ভিস লেন ট্রেইলার বা বড় ট্রাকের চলাচলের উপযোগী কিনা- এ প্রশ্নের তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও এক্সপ্রেসওয়েতে কেউ অল্প দূরত্বে চলে না।

গত ২২ জুন কেইসিকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। মাত্র আট দিনের প্রস্তুতিতে তারা টোল আদায় করতে পারবে কিনা- এ প্রশ্নের সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান জানান, তারা এক মাস ধরেই কাজ করছেন। সাময়িক একটি সফটওয়্যার ইনস্টল করা হয়েছে। যা ম্যানুয়ালও নয়। আবারও অটোমেটেডও নয়। আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে পুরোপুরি অটোমেশন পদ্ধতিতে টোল আদায় হবে। আপাতত অস্থায়ী বুথে টোল আদায় হবে। আইটিএসের ফলে দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে জানা যাবে। কেউ ট্রাফিক নিয়ম ভাঙছে কিনা তা জানা যাবে। হতাহতদের উদ্ধার করা হবে।

 

Comment here