কাল হাটাহাজারী মাদ্রাসা মাঠে আল্লামা শফীর জানাজা - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
চট্টগ্রামসমগ্র বাংলা

কাল হাটাহাজারী মাদ্রাসা মাঠে আল্লামা শফীর জানাজা

হাটহাজারী প্রতিনিধি : হাটাহাজারী মাদ্রাসা মাঠে আগামীকাল শনিবার জোহরের নামাজের পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার শেষে মাদ্রাসার উত্তর পাশে মাকবারায়ে জামিয়া মসজিদের পশ্চিম পাশে তার অছিয়ত অনুযায়ী দাফন করা হবে।

আজ শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে সাংবাদিকদের এ কথা জানান আল্লামা শফীর ছোট ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী। তিনি জানান, হেফাজত ইসলাম আমিরের জানাজা একটিই হবে। জানাজার পর হাটহাজারী মাদ্রাসার পাশে তাকে দাফন করা হবে।

এর আগে আজ সন্ধ্যা ৬টা ২০মিনিটে রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন আল্লামা শফী। কওমী অঙ্গনের এ বর্ষীয়ান আলেমের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। মৃত্যুকালে আল্লামা আহমদ শফী স্ত্রী, দুই ছেলে, তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী, ভক্ত ও সহকর্মী রেখে গেছেন।

 

আজ বিকেলে আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকায় নেওয়া হয়। এরপর তাকে গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে তার শারীরে অসুস্থতা অনুভব হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়।

পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি বিভাগীয় প্রধান ডা. কাজলের তত্ত্বাবধানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আল্লামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। যাদের কাছে তিনি ‘বড় হুজুর’ নামে পরিচিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে আলোচনায় উঠে আসেন আহমদ শফী।

তিনি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ার টিলা গ্রামে এক মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে বরকত আলীর ঘরে জন্ম নেন। তার মার নাম মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফী দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক ছিলেন। তার দুই ছেলের মধ্যে মাওলানা আনাস মাদানী হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক ও হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক। অন্যজন মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ার টিলা কওমী মাদ্রাসার পরিচালক।

আহমদ শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন।

দেওবন্দে থাকাবস্থায় তিনি বহু বুযুর্গের সান্নিধ্যে নিজের ঈমান-আমলের ওপর মেহনত করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অনতম নেতা আওলাদে রাসূল মাওলানা সাইয়্যেদ হোসাইন আহমাদ মাদানী (রহ.)। আল্লামা শাহ আহমদ শফী হফিযাহুল্লাহ দেওবন্দে অধ্যয়নরত অবস্থাতে তার মেধা-দক্ষতা দেখে ছাত্র অবস্থায় তাকে মাওলানা সাইয়্যেদ হোসাইন আহমাদ মাদনী খেলাফত প্রদান করেন।

আল্লামা শফী ছিলেন ঊর্দু, ফার্সি, আরবি ভাষা ও সাহিত্যের পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষায় একজন সুদক্ষ পণ্ডিত। তিনি ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে আসীন ছিলেন।

তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া হলেও হাটহাজারী উপজেলার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের কাছে তার কথাই ছিল শেষ কথা। এ মাদ্রাসার শিক্ষকদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল তার ছাত্র। দেশের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাটাহাজারী মাদ্রাসাটি আল্লামা শফীর কারণে বেশ আলোচিত ছিল। ৩৪ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক পদে থাকা দেশের প্রবীণ কওমি আলেম আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বেই প্রায় একযুগ আগে গঠিত হয়েছিল আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। শুরু থেকেই আল্লামা আহমদ শফী সংগঠনটির আমীরের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

২০১৩ সালের ৫ ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবরোধ ও সমাবেশের কর্মসূচির পর ব্যাপকভাবে দেশে ও দেশের বাইরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হন আহমদ শফী। আহমদ শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে ৯টি বইয়ের রচয়িতা। তিনি দেশের কওমী মাদ্রাসা সমূহের সম্মিলিত শিক্ষা সংস্থা আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) এর সভাপতি পদে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আসীন ছিলেন।

প্রসঙ্গত, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহতামিম বা মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে যাওয়ার একদিন পরই আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন হেফাজত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী। পরে মাদ্রাসার শুরা কমিটি তাকে আমৃত্যু সদরে মুহতামিত হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ করেন।

Comment here