নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশেষ পরিস্থিতি, মানবিক বিবেচনা ও সহানুভূতিশীল বা নিকট আত্মীয়ের বাইরে পরিচিত কিংবা সম্পর্ক আছে, এমন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কিডনি দিতে পারবেন বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে মানব শরীরের এই অঙ্গটি কেনাবেচা করা যাবে না। এ ছাড়া মাদকাসক্ত এবং কিডনি কেনাবেচা করেন এমন ব্যক্তির কিডনি দেওয়া যাবে না বলেও আদেশ দেন উচ্চ আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯’ এর ২(গ), ৩ ও ৬ ধারা কেন সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করেন আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার নীলিমা ইয়াসমিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও মো. শাহীনুজ্জামান শাহীন।
২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯’ এর ২(গ), ৩ ও ৬ ধারা কেন সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। মানবদেহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯-এর ধারা তিনটি হলো ২(গ), ৩ ও ৬।
রায়ের পর গণমাধ্যমে কথা বলার সময় ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম জানান, রায়ের ফলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানে নিকট আত্মীয়ের গণ্ডিতে আর পড়তে হবে না। অর্থাৎ নিকট আত্মীয় ছাড়া কেউ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবে না, আইনের এমন বিধান আর কার্যকর থাকছে না। একই সঙ্গে আদালত এ-সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালাও সংশোধন করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আইন অনুসারে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনাবেচা নিষিদ্ধ। রায়ে আদালত কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। রাশনা জানান, এসব নির্দেশনায় আদালত বলেছেন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের ক্ষেত্রে ‘ইমোশনাল ডোনেশন’ হচ্ছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করার জন্য প্রত্যেকটি হাসপাতালে একটি করে প্রত্যয়ন বোর্ড গঠন করতে হবে। ওই বোর্ড আত্মীয়-স্বজনদের জিজ্ঞাসা করে দাতার সঙ্গে রোগীর পরিচয় নির্ণয় করবে। দাতা নিজ ইচ্ছায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করছেন কি না, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেনাবেচা হচ্ছে কি না, দাতা মানসিকভাবে সুস্থ বা মাদকাসক্ত কি না, তাও নির্ণয় করতে হবে।
ফাতেমা জোহরা নামের এক নারী ২০১৫ সালে তার মেয়ে ফাহমিদাকে একটি কিডনি দান করেন। তা সত্ত্বেও মেয়ের কিডনি অকেজো হয়ে যায়। এরপর কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য দাতা পেলেও আইনগত বাধায় মেয়েকে কিডনি দিতে না পেরে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। নিকট আত্মীয় ছাড়া মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার সুযোগ না রাখায় আইনের প্রসার বাড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন রাশনা ইমাম।
এ ছাড়া ১৯৯৯ সালের আইনের কয়েকটি বিধি প্রণয়নে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছিলেন আদালত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এসব রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। পরে গত ২১ নভেম্বর এসব রুলের শুনানি নিয়ে রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন হাইকোর্ট।
Comment here