কুষ্টিয়ায় বাড়ছে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ; একই পরিবারের ১৭ জন প্রতিবন্ধী - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

কুষ্টিয়ায় বাড়ছে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ; একই পরিবারের ১৭ জন প্রতিবন্ধী

মোঃ জিয়াউর রহমান কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ ৩রা ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। সারাদেশে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী রয়েছেন কুষ্টিয়া জেলায়। জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় বর্তমানে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ৭৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৯ হাজার ৭৩২ ও নারী ১৮ হাজার ২৯৭ জন। এ ছাড়া হিজড়া প্রতিবন্ধী আছেন ৬৮ জন।
এ জেলায় সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধী রয়েছেন দৌলতপুর উপজেলায়। এখানে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা রয়েছেন ১৪ হাজার ১৫৮। এছাড়া ভেড়ামারা উপজেলায় ৪ হাজার ৪৪৫, খোকসা উপজেলায় ৩ হাজার ২৪৭, কুমারখালী উপজেলায় ৬ হাজার ৮৩২, মিরপুর উপজেলায় ৮ হাজার ৫১৯ ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় রয়েছে ১০ হাজার ৫৭৭ প্রতিবন্ধী রয়েছেন।
ইউনিয়নভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী রয়েছেন ৭৪২ জন। এ ইউনিয়নের উত্তর কয়া গ্রামে এমন একটি পরিবার আছে, যেটির ১৭ জন সদস্যই প্রতিবন্ধী। পরিবারটিতে আরও কয়েকজন প্রতিবন্ধী সদস্য ছিলেন, তবে তারা মারা গেছেন।
প্রতিবন্ধী রয়েছেন এমন প্রতিটি পরিবারই দুঃসহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। খোকসা উপজেলার কালীবাড়িপাড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবু কালামের তিন সন্তানের মধ্যে বড় দুই ছেলে মুন্না (১৯) ও অমিত (১৩) জন্মগতভাবেই শারীরিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। এ রকম প্রতিটি পরিবারকেই কাটাতে হচ্ছে দুঃসহ সময়।
অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা দিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন গাজী গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়ায় শহর সমাজসেবা সমন্বয় পরিষদের মাধ্যমে ৩৫ জন বিশেষ শিশুদের নিয়ে পরিচালিত ‘এনডিডি প্রটেকশন অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার’ স্কুলটি গত বছর প্রতিষ্ঠিত হয়। শিশু কেন্দ্রিক পরিকল্পনা অনুসারে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে এখানে। শিক্ষকদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে এই বিশেষ শিশুরা।
কুষ্টিয়া জেলায় প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ এখানকার জনসাধারণের দারিদ্র্য ও অপুষ্টি। এ ছাড়া বাল্যবিয়ের প্রবণতা ও তামাকের ব্যবহারও প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলেছে বলে জানালেন মাজনুল কবীর পান্না। দীর্ঘ ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। পান্না নিজেও একটা সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করার পর থেকে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ শুরু করেন।
একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও বিচলিত নন তিনি। তিনি দৌলতপুরে একটি অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। তার বিদ্যালয়ে দুইশতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। বিনামূল্যে পাঠদানের মাধ্যমে তাদের উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন সাফ’র নির্বাহী পরিচালক মীর আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলায় তামাকের ব্যাপক প্রভাব থাকায় এখানেও প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নিচ্ছে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরাও তামাকের কাজের সময় সম্পৃক্ত থাকায় তাদের সন্তানরাও প্রতিবন্ধী হতে পারে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, জেলায় প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন ও তাদের স্বাবলম্বী করতে সরকারিভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মানুষজন যাতে প্রতিবন্ধীদের বোঝা না ভেবে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে, সে জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

Comment here