‘ক্রসফায়ার দেওয়া হতে পারে, ২ কোটি টাকা রেডি করেন’ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

‘ক্রসফায়ার দেওয়া হতে পারে, ২ কোটি টাকা রেডি করেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর হাতিরঝিল থানা এলাকা থেকে তামজিদ হোসেন (২৭) নামে এক যুবককে অপহরণের অভিযোগে আজ শুক্রবার ‌র‌্যাবের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তামজিদকে অপহরণের পর তার বোনকে ফোন করেন র‌্যাবের এই সদস্যরা। তারা বলেন, ‘তাকে (তামজিদকে) ক্রসফায়ার দেওয়া হতে পারে। ভাইকে বাঁচাতে চাইলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন।’

তামজিদকে অপহরণের অভিযোগে আজ শুক্রবার হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছেন তার ছোট বোন রাইয়ানা হোসেন। মামলার অভিযোগে তিনি র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথপোকথনের এসব তথ্য উল্লেখ করেন। বন্দীদশায় মারধরে আহত ভুক্তভোগী তামজিদ রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মামলার এজাহারে তামজিদের বোন রাইয়ানা উল্লেখ করেন, সপরিবারে তারা হাতিরঝিলের মীরবাগ এলাকায় বসবাস করেন। তামজিদ হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে উত্তরা যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। দুপুর ১২টার দিকে অচেনা এক ব্যক্তি ০১৩১০৮৬২৩২৩ নম্বর থেকে রাইয়ানা হোসেনের ফোনে ফোন করে নিজেকে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে জানায়, তামজিদ র‌্যাব হেফাজতে আছেন। ‘আপনি থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানাবেন না। যদি থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানান, তাহলে আপনার বড় ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।’

এ কথা বলে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি লাইন কেটে দেন। পরবর্তীতে রাইয়ানা অনেকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে সেই ব্যক্তি আবার ফোন করে রাইয়ানাকে জানায়, তার বড় ভাইকে র‌্যাব অফিসে সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক মামলা হবে।

তামজিদকে র‌্যাবের কোন অফিসে, কোন সিনিয়র অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন জানতে চাইলে সেই ব্যক্তি জানায়, এই মুহূর্তে আপনার ভাই র‌্যাবের কোন অফিসে আছে, তা বলা যাবে না। তাকে ক্রসফায়ার দেওয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাচাঁতে চান, তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন। এর কিছুক্ষণ পর সেই ব্যক্তি মোবাইলে তামজিদ হোসেনকে মারধরের শব্দ শোনান।

মামলার অভিযোগে বাদী জানান, অপহরণকারীরা একপর্যায়ে তার ভাইকে মোবাইল দিলে তামজিদ কাঁদতে কাঁদতে জানায়, তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে বেধম মারধর করছে। তামজিদ তখন কাঁদতে কাঁদতে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল।

পরবর্তীতে ওই নম্বর থেকে অচেনা আরও দুই থেকে তিনজন ফোন করে টাকা জোগাড় করতে পেরেছে কিনা রাইয়ানার কাছে জানতে চায়। তিনি (রাইয়ানা) তাদের বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাবো? এক পর্যায়ে র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি তামজিদের মুক্তিপণ বাববদ ১৫ লাখ টাকা দাবি করে রাইয়ানার কাছে। তাদের কাছে কোনো টাকা নেই জানালে সেই ব্যক্তি নগদ ১২ লাখ টাকা নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক মার্কেটে যেতে বলেন। থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে জানালে তামজিদকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে ফের হুমকি দেয় অপহরণকারীরা।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তামজিদের ব্যবহৃত এয়ারটেল নম্বর থেকে রাইয়ানার সঙ্গে তামজিদকে কথা বলিয়ে দেয়। তামজিদ তখন তাকে খুব মারধর করা হচ্ছে বলে কান্না জড়িত কণ্ঠে অপহরণকারীদের দাবিকৃত টাকা দিয়ে দিতে বলেন। রাইয়ানা তখন তার অবস্থান জানতে চাইলে তামজিদ জানায়, তার হাত-পা-চোখ বাঁধা। তিনি কোথায় আছেন তা বলতে পারবেন না। অপহরণকারীরা তার বড় ভাইকে অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসেবে দুই কোটি টাকা আদায়ের জন্য অজ্ঞাত স্থানে আটক রেখেছে এবং তাকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও এজাহারে উল্লেখ করেন রাইয়ানা হোসেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, এই অপহরণ চক্রের মোট ছয়জন ছিল। জড়িত দুইজন পলাতক রয়েছেন। অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা করা হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে র‌্যাবের চার সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। শুক্রবার বিকেলে হাতিরঝিল থানা পুলিশের কাছ থেকে চার সদস্যকে র‌্যাবের কাছে নেওয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে, তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি আরও জানান, তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত হবে। কোনো ধরনের সহানুভূতি দেখানো হবে না। এই পর্যন্ত র‌্যাবে যতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বাহিনী কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় নেয় না। র‌্যাবে অপরাধ করলে শাস্তি দেওয়ার গড় শতভাগ।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, ওই ঘটনায় পলাতক দুজনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। তারা র‌্যাবের সদস্য হলে তাদেরকেও শাস্তি পেতে হবে। এ ঘটনায় অপরাধের অনুসন্ধান করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তারপর পুরো অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে সকলের বিরুদ্ধে নিয়মিত ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গ্রেপ্তারকৃত চারজন আপাতত র‌্যাবের হেফাজতে রয়েছে এবং থাকবে। তবে গ্রেপ্তার র‌্যাব সদস্যদের পরিচয় জানাতে চাননি তিনি।

Comment here