গণভবনে বাস করা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

গণভবনে বাস করা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর গত ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর গণভবনে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। একদিন পর গণভবনে নিরাপত্তায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়।

বাংলাদেশের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন ছিল ‘গণভবন’। এর আগে কোনো প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা নগরের এই বাসভবনে থাকেননি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে শেরেবাংলা নগরে বর্তমান গণভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে তিনি সেখানে অফিস শুরু করেন। তবে তিনি বাস করতেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর সামরিক শাসন জারি হলে গণভবনকে পরিণত করা হয় সামরিক আদালতে। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে অফিস করতেন বঙ্গভবনে। আর বসবাস করতেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে।

এইচএম এরশাদ সামরিক শাসক এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্যান্টনমেন্টে বসবাস করতেন। তবে তার আমলে তেজগাঁওয়ে সাবেক সংসদ ভবনকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পরিণত করা হয়। বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রূপান্তর করেন। তিনি এখানে অফিস শুরু করেন। তবে খালেদা জিয়া বসবাস করতে থাকেন ক্যান্টনমেন্টে। এভাবে অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গণভবনে বাস করা একমাত্র প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণভবন থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের বাসভবন ছেড়ে যাওয়ার খবর শোনার পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ঢুকে পড়েন গণভবনে। সেদিন গণভবন হয়ে ওঠে গণমানুষের। ক্ষোভের বহির্প্রকাশ হিসেবে গণভবন থেকে যে যা পেয়েছে লুট করে নিয়ে গেছে। পরে আবার কিছু জিনিস ফেরতও দিয়েছে। তবে সেদিন ক্ষোভে গণভবনে থাকা একাধিক গাড়ি ও ভবনের জিনিসপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ভেঙে ফেলা হয় গণভবন চত্বরে থাকা বিভিন্ন ভবনের দরজা, জানালা। পুকরের মাছ, সবুজ লনে চাষ করা সবজি- সবকিছু লুটপাট হয়ে যায়। সেদিন যে যা পেরেছেন সেটাই সঙ্গে নিয়ে যান। টেলিভিশন, ফ্রিজ, শাড়ি, সোফা, এসি, মাছ, ফ্যান, হাঁস, মিষ্টি, ফুলের টব কোনো কিছুই বাদ যায়নি।

গণভবনে চারদিকে যে নিরাপত্তা দেওয়াল ছিল সেগুলোও ভেঙে ফেলা হয়। সাধারণত গণভবন ও এর চারদিকে থাকে কঠোর নিরাপত্তা। তবে সেদিন কোনো নিরাপত্তাই ছিল না। গত ৫ আগস্ট লুটপাটের পর ৬ আগস্ট দুপুর থেকে গণভবন নিজেদের তত্ত্বাবধানে নেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরপর কয়েক দিন সেখান থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গণভবনের প্রধান প্রবেশদ্বারের সামনে বড় একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ পড়ে রয়েছে। গেটের পাশে কয়েকজন সেনাসদস্য পাহারা দিচ্ছেন। তবে এখন আর এসপিবিএন সদস্যরা ভবনের চারপাশে থাকেন না। সাধারণ মানুষও এখন প্রবেশ করতে পারেন না।

ভাঙচুর ও লুটপাটের পর গণভবন পুনরায় সংস্কার হবে কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী সানাউল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, গত ৫ আগস্ট ঘটনার পর ৬ আগস্ট থেকে গণভবন সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সেদিনের পরিস্থিতির পর গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে কেউ সেখানে পরিদর্শন করেনি। তাই কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তারও কোনো হিসাব নেই। তা ছাড়া বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণভবনের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তাই এটি সংস্কার বা নির্মাণ কোনোটিই আপাতত ভাবনায় নেই।

এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় ভিডিও বার্তায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন ‘গণভবনের জায়গায় গণহত্যা মিউজিয়াম তৈরি করা হবে। সেখানে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র কিংবা অপপ্রচার চালিয়ে গত ১৫ বছরের অনাচার-অবিচার জনগণকে ভুলিয়ে দেওয়া যাবে না। রাষ্ট্রীয় স্থাপনা গণভবন ছিল বা দেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী স্মারক। গণভবন বা বর্তমানে স্বৈরাচারী হাসিনার দুর্নীতি, দুঃশাসন, অনাচার, অপকর্মের প্রতীক। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে এই গণভবনকে গুম, খন, অপহরণ এবং গণহত্যার মিউজিয়াম হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যগণের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে তৎকালীন সরকার জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা এবং আনুষাঙ্গিক বিষয়ে বিধান প্রণয়নকল্পে আইন করে। সেই আইনের উপধারা-৩ এর (০ক) তৎকর্তৃক নির্ধারিত শর্তে উক্ত পরিবার-সদস্যগণের প্রত্যেকের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে; এবং (খ) উহার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুবিধাদিও তাহাদিগকে প্রদান করিবে। এই আইনের বলে গণভবন শেখ হাসিনার বাসভবন হিসেবে গণ্য হয়।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সুরক্ষায় বিশেষ আইনটি বাতিল করে দেয়। এর আগে ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গণভবনেই ৫ বছর ছিলেন শেখ হাসিনা। ওই সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে হিসেবে প্রতীকী মূল্যে বাড়িটি তার জন্য বরাদ্দ দেয় সরকার। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার এক বছর দুই মাস পর সরকারি বাসভবন হিসেবে গণভবনে ওঠেন শেখ হাসিনা।

Comment here