গরমে পুড়ছে সারাদেশ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। দেশের পাঁচ জেলা- পাবনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলায় এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এসব অঞ্চলের মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবীরা সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন। এর মধ্যে দুদিন রাজধানী ও ফরিদপুরসহ কিছু অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি হলেও স্বস্তি মেলেনি। আবহাওয়া অফিসও কোনো সুখবর দিতে পারছে না। বরং বলা হচ্ছে, চলতি মাসে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। গতকালও তাপমাত্রা বাড়ার পূর্বাভাস দিয়ে আগামী তিনদিনের জন্য হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টা সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে। এদিকে প্রচণ্ড গরমে বেশি ঠাণ্ডা পানি বা পানীয় পান থেকে বিরত থাকা ও যতদূর সম্ভব ছায়ায় অবস্থান করার পরামর্শ স্বাস্থ্য বিভাগের। কারণ গরমে হঠাৎ খুব বেশি ঠাণ্ডা পানি পান করলে রক্তনালি সংকুচিত হয়ে স্ট্রোক হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, পাবনা, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দিনাজপুর, রাঙামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা বাড়লেও রাতে অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, আগামী ৭২ ঘণ্টায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সে সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, চলতি মাসে দু-চারটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং এক-দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। অতি তীব্র তাপপ্রবাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। এ ছাড়া এই সময়ে দু-একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে; যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ/ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায়। টানা চার দিন ধরে এ জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহ চলছে। এ তাপমাত্রা বেড়ে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। টানা তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ। অতি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন তেমন বাইরে বের হচ্ছেন না। দিনমজুররা দুপুরের আগেই কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছেন।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, ঈশ^রদীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, শুক্রবার বিকাল ৩টায় উপজেলায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এটি চলতি মৌসুমে
ঈশ্বরদীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গত সাত দিন ধরে ঈশ্বরদীতে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইছে। চলমান তাপপ্রবাহ পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
যশোর প্রতিনিধি জানান, ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় যশোরের মানুষসহ প্রাণীকুলের হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে, শ্রমজীবী মানুষের কষ্টের শেষ নেই। এর মধ্যে আবার খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ অধিকাংশ টিউবওয়েলে উঠছে না পানি, যা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোডশেডিং তো আছেই। প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকসহ সর্দি, জ¦র ও ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে হাসপাতালগুলোতে। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। সবমিলে গরমে পীড়াদায়ক পরিস্থিতি বিরাজ করছে যশোরে। যশোর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ বলেছেন, লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ার কারণে কোথাও কোথাও পানি উঠছে না। একটু বৃষ্টি হলে এ সমস্যা কেটে যাবে।
Comment here