নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় বিল থেকে নূরজাহান (৫৮) নামে এক নারীর লাশের পাঁচ খণ্ড উদ্ধার ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। মূলত অর্থ-সম্পত্তির জন্য তাকে হত্যা করা হয়। এতে নিহতের ছেলে, তার দুই আত্মীয়, বন্ধু ও প্রতিবেশীসহ সাতজন জড়িত। এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত গত ৭ অক্টোবর নিহত নূরজাহানের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর ১৫ দিন পর আজ বৃহস্পতিবার তার ছেলে হুমায়ন কবির হুমাকে (২৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই সঙ্গে হুমার বন্ধু নীরব (২৬) প্রতিবেশী কসাই নূর ইসলাম (৩৮), হুমার মামাতো ভাই কালাম প্রকাশ মামুন (২৬) ও মামাতো বোনের স্বামী সুমনকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। ইসমাইল ও হামিদ দুই আসামি এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি, চাপাতি, কোদাল, বালিশ ও মৃতের পরনের শাড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নুরজাহান হত্যা ও তার রহস্য উদঘাটনের ব্যাপারে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বিস্তারিত বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
যেভাবে হয় আসামি গ্রেপ্তার
নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন জানান, গত ৭ অক্টোবর বিকেলে সুবর্ণচরের জাহাজমারা গ্রামের একটি বিলের মাঝের বিভিন্ন ক্ষেত থেকে নূরজাহানের লাশের পাঁচটি খণ্ড উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার ছেলে হুমায়ন কবির হুমা বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কোনো প্রকার সূত্র ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ। একাধিক টিম হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের চিহ্নিত করা, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধারে জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে সক্রিয় হয়।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানান, অভিযানকালে সন্দেহজনকভাবে মৃত নারীর ছেলে হুমায়ন কবির হুমার বন্ধু নীরব ও প্রতিবেশী কসাই নূর ইসলামকে আটক করা হয় তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বটি, চাপাতি, কোদাল, বালিশ ও মৃতের পরনের শাড়ি উদ্ধার করা হয়। পরে তারা দুইজন স্বেচ্ছায় নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেয়। এর ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও আগের মামলার বাদি হুমায়ন কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হুমা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত তার মামাতো ভাই কালাম প্রকাশ মামুন ও মামাতো বোনের স্বামী সুমনের তথ্য জানালে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়।
হত্যাাকাণ্ড যেভাবে ঘটে
সংবাদ সম্মেলনে এসপি আলমগীর জানান, হুমায়ন কবিরের সৎভাই বেলাল নিজের গরু, পুকুরের মাছ ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসার পুঁজির জন্য মা নূরজাহানকে জিম্মাদার রেখে চার লাখ টাকা সুদ নেন। ওই টাকা পরিশোধ করা অবস্থায় দেড় বছর আগে একটি ইটভাটায় মারা যান তিনি। বেলালের মৃত্যুর পর পাওনাদাররা টাকার জন্য হুমায়ন ও তার মাকে চাপ দিতে থাকে। হুমায়ন চেয়েছিল মৃত বেলাল ও তার মায়ের নামে থাকা জায়গা জমি বিক্রি করে ওই টাকা শোধ করতে। কিন্তু নূরজাহান তাকেই নিজের জমি বিক্রি করে দেনা পরিশোধ করতে বলেন। এ নিয়ে মা-ছেলের মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকতো।
এর মধ্যে হুমার মামা দুলাল মাঝির কাছ থেকে ৬২ হাজার ৫শ টাকা পাওনা ছিলেন নূরজাহান। তিনি প্রায়ই টাকা ফেরতের জন্য দুলালকে জোর করতেন। এসব বিষয় নিয়ে নূর জাহানের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল দুলালের ছেলে কালাম ও মেয়ের জামাই সুমন। এর জের ধরেই হুমায়ন, কালাম, সুমন, প্রতিবেশি ইসমাইল, হামিদসহ মোট সাতজন এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী দেনামুক্ত হতে ওইদিন তারা নূরজাহানকে ঘুমের মধ্যে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে। পরে লাশটি পাওনাদারদের জমির পাশে নিয়ে বটি, চাপাতি ও কোদাল দিয়ে পাঁচ খণ্ড করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেয়। ঘটনায় এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর আসামি ইসমাইল ও হামিদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন।
Comment here