নিজস্ব প্রতিবেদক,বগুড়া : বগুড়ার শিবগঞ্জ থানায় এক গৃহবধূ (১৭) ধর্ষণচেষ্টার মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে উল্টো ২৯০ ধারায় মামলা দিয়ে তাকে যৌনকর্মী হিসেবে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদিউজ্জামান ও উপপরিদর্শক (এসআই) রতন কুমার রায়ের বিচার দাবি করেন ওই গৃহবধূর মা।
ওই গৃহবধূর মা অভিযোগ করে আজ শনিবার দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমার মেয়ের সঙ্গে সিহালী ফকিরপাড়া গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে কলেজছাত্র রামিম হাসান রিমনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রিমনের পরিবার রাজি না থাকায় আমি মেয়েকে সিহালী ফকিরপাড়া গ্রামে বিয়ে দেই। বিয়ের পরও রিমন আমার মেয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সম্পর্ক অব্যাহত রাখে। স্বামী বাড়িতে না থাকায় রিমন গত ২৪ নভেম্বর দুপুরে মেয়ের বাড়িতে ঢোকে এবং তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময় পিরব ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাশেম বাড়িতে ঢুকে রিমন ও আমার মেয়েকে ধরে পুলিশকে খবর দেন। পরে শিবগঞ্জ থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান ও এসআই রতন কুমার রায় দুজনকে আটক করে নিয়ে যান। আমার মেয়ে রিমনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার মামলা করতে চাইলে পুলিশ তা নেয়নি। তারপর দুজনকে দণ্ডবিধির ২৯০ ধারায় মামলা দিয়ে (পতিতাবৃত্তি) চালান দেওয়া হয়। পরে আদালত দুজনকে জামিনে ছেড়ে দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসআই রতন কুমার রায় আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা ধর্ষণচেষ্টার মামলা না নিয়ে তার মেয়েকে পতিতা হিসেবে চালান দিয়ে তাদের সম্মান নষ্ট করেছেন। বর্তমানে মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। এতে আমার মেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপায় না পেয়ে মেয়ে আদালতে মামলা করেছে। আমি এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
তবে ওসি বদিউজ্জামান জানান, ওই গৃহবধূকে অসামাজিক কার্যকলাপের সময় জনগণ হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেয়। তাকে ২৯০ ধারায় মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে। তিনি বা তার মা মামলার জন্য থানায় আসেননি।
এ প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, ঘটনার সময় তিনি ছুটিতে থাকায় বিষয়টি তার জানা নেই।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা জানান, গৃহবধূর অভিযোগ পেয়েছেন, তবে তিনি ও তার মায়ের অভিযোগ সত্য নয়। জনগণ তাদের হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছে। তাই দুজনকে ২৯০ ধারায় কোর্টে চালান দেওয়া হয়।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিমনের সঙ্গে ওই গৃহবধূর মাদ্রাসা জীবনে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরও রিমন তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে সম্পর্ক রাখেন। গত ২৪ নভেম্বর দুপুরে রিমন ওই গৃহবধূর স্বামীর বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করার একপর্যায়ে ঘরে ঢুকে পড়েন। এ সময় সেখানে থাকা ইউপি সদস্য আবুল কাশেম তাদের আটক করে চিৎকার শুরু করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত দুজনকে আটকে রাখেন তিনি। পরে সুবিধা করতে না পেরে তিনি তাদের শিবগঞ্জ থানায় সোপর্দ করেন।
পরে পুলিশ রিমনের বাবার সঙ্গে যোগসাজশ করে গৃহবধূকে পতিতা হিসেবে আদালতে চালান দেয়। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
ওই গৃহবধূ বগুড়ার পুলিশ সুপার, শিবগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ ও আদালতে মামলা করেছে। এরই মাঝে এসআই রতন কুমার রায়কে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
Comment here