চরফ্যাসনে শসার বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে নেই হাসি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
বরিশালসমগ্র বাংলা

চরফ্যাসনে শসার বাম্পার ফলনেও কৃষকের মুখে নেই হাসি

সৌরব, চরফ্যাসন উপজেলা(ভোলা) প্রতিনিধিঃ ভোলা জেলার চরফ্যাসন উপজেলায় চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে শসা চাষীদের।
চরফ্যাসন উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ দাস বলেন, চরফ্যাসন উপজেলায় সারা বছর জুড়েই শসার চাষ হয়। তবে কৃষি তথ্য অনুযায়ী এ বছর  উপজেলায় অাউশ মৌসুমে প্রায় ৭ হাজার ৫শত  ২৫ হেক্টর  এবং রবি মৌসুমে ২ হাজার ৮শত ৯০ হেক্টর জমিতে শসা চাষ  হয়েছে।তিনি অারো বলেন, অাবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবংশসা গাছে  পোকামাকড়ের অাক্রমন কম হওয়ায় এ বছর শসার বাম্পার ফলন হয়েছে।
চরফ্যাসন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, দিন-রাত পরিশ্রম আর মূলধন বিনিয়োগ করে শসা উৎপাদন করেছেন চরফ্যাসন  উপজেলার চাষিরা। কিন্তু লাভ যাচ্ছে সব মধ্যস্বত্বভোগীর পেটে! ভোক্তারা ১২-১৫ টাকায় প্রতিকেজি শসা কিনলেও চাষির পকেটে ঢুকছে মাত্র ৩-৪ টাকা।হাতবদলে দাম তিনগুণ হলেও ঠকছেন মাঠের চাষি। এ উপজেলায় শসার বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষি।
চরফ্যাসন  উপজেলা সদর থেকে কয়েক কিলোমিটার পথ এগোলেই দুলারহাট ঈদগাহ মাঠে ভ্রাম্যমান শসা বাজার। শসার ভরা মৌসুমে বাজারটি জমজমাট। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এখানকার মুজিবনগর, অাহম্মদপুর, নুরাবাদ,নীলকমল, অাবুবকরপুরসহ  বিভিন্ন ইউনিয়নের ক্ষেত থেকে শসা তুলে মাঠে জড়ো করেন চাষিসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।অনেকেই আবার সরাসরি স্থানীয় বাজারে পাইকারদের কাছে নিয়ে আসছেন। মাপামাপির কাজ শেষ হতেই পানিতে ধুয়ে শসা বস্তাবন্দি করা হচ্ছে। বিকেলে ট্রাক, পিকআপে করে এ শসা চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। পাইকার ও আড়তদারদের পদচারণায় দুলারহাট বাজারটি সরগরম। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন বাজারটিতে গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার মণ শসা বেচা-কেনা হয়।
সোমবার (১৬ মার্চ) বিকেলে চরফ্যাসন   উপজেলার  দুলারহাট  পাইকারি বিক্রেতা মোঃ জামাল হোসেন (৩৮) বলেন, চাষিদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৪ টাকা কেজিতে শসা কেনা হচ্ছে। ভোলার বিভিন্ন বাজারে সেই শসাই বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিতে। তবে জামাল হোসেনের দাবি, বস্তা কেনা থেকে শুরু করে পরিবহন ও শ্রমিক খরচের পর লাভের অঙ্কটা খুব বেশি নয়।
স্থানীয় নীলকমল ইউনিয়নের চরযমুনা  গ্রামের কামরুল শাহজী (৩৬) এবার দেড় বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছেন। ফলন ভালো হলেও পয়সা পাচ্ছেন না তিনি। এ চাষি জানান, জমি তৈরি, বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক মিলিয়ে উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। মণপ্রতি ১৬০ টাকা আর কেজি হিসেবে ৪ টাকায় শসা বিক্রি করতে হচ্ছে তাকে। অথচ তার উৎপাদন খরচই পড়েছে কেজি প্রতি ১০ টাকার উপরে।
একই রকম কথা জানান, মুজিবনগর ইউনিয়নের চাষি আব্দুল অালী (৫০),  মোহাম্মদ সেলিম (৩৫), জসিম উদ্দিন (৩২) ও রফিকুল ইসলাম। তারা জানান, প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা লোকসানে শসা বিক্রি করতে হলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা কেজিতে হাতিয়ে নিচ্ছে ৮-১০ টাকা।
এ ব্যাপারে চরফ্যাসন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবু হাসনাইন বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে বেশ কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণের চেষ্টা চলছে। সবজির বাজার দর, বিপণন, সরবরাহ ও সবজি সংরক্ষণে কৃষি বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ করে যাচ্ছে।

Comment here