নিজস্ব প্রতিবেদক : নেত্রকোনার আল-নূর হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজারের সঙ্গে গতকাল রোববার রাতে ১২ হাজার টাকায় রোজিনার সিজারিয়ান অপারেশনের চুক্তি হয়। কিশোরগঞ্জ থেকে আসা চিকিৎসক জীবন কৃষ্ণ সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালে এসে তাড়াহুড়ো করে রোজিনার সিজারিয়ান অপারেশন করেন।
অপারেশনের আগে চিকিৎসক কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং নার্স কেউ বলেননি রোগীর রক্ত লাগবে। অপারেশনে ছেলে সন্তান জন্ম হওয়ার ঘণ্টাখানেক পর প্রসূতির অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে রক্ত লাগবে জানিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন চিকিৎসক জীবন কৃষ্ণ। ততক্ষণে প্রসূতির মৃত্যু হয়।
এ অবস্থায় রোগীকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে নেওয়ার পর রোজিনাকে মৃত ঘোষণা করেন মেডিকেল কর্মকর্তা চিকিৎসক টিটু রায়।
ঘটনার পর থেকে সারা রাত মেয়ের লাশের পাশে বসেছিলেন বাবা চান্দু মিয়া। এ ঘটনায় রাতেই নেত্রকোনা মডেল থানায় অভিযোগ করেন মৃতের স্বজনরা।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন নেত্রকোনা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের বারান্দায় প্রসূতির মরদেহ রাখা হয়েছে। মৃতের বাবা ও স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে আমাদের। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মৃত রোজিনার স্বামীর নাম আশিক মিয়া। তাদের বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে। তিনি জানান, চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
অবহেলায় জড়িতদের শাস্তি চেয়েছেন রোজিনার বাবা চান্দু মিয়াও। তিনি বলেন, তারা মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করে। তার মেয়ে মারা যাওয়ার পরও অর্থের জন্য অন্য হাসপাতালে মরদেহ পাঠিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, তা না হলে আরও অনেক রোগীর মৃত্যু হবে।
নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা চিকিৎসক টিটু রায়ও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে আসার অনেক আগে রোজিনার মৃত্যু হয়েছিল। রোববার রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের বারান্দায় তার মরদেহ রাখা হয়। হাসপাতালের বারান্দায় মেয়ের মরদেহের পাশে বসে সারা রাত কাটিয়ে দেন বাবা চান্দু মিয়া।’
এ বিষয়ে জানতে আল-নূর হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার এবং কর্তৃপক্ষের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি কেউ। ঘটনার পর থেকে চিকিৎসক জীবন কৃষ্ণের মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে।
Comment here