চীন ফেরত আরও ৫ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

চীন ফেরত আরও ৫ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে

দুলাল হোসেন : প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীন থেকে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর আশকোনার হজক্যাম্পে কোয়ারেনটাইনে রাখা ৩০২ বাংলাদেশির মধ্যে আরও পাঁচজন সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল রবিবার তাদের সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এ নিয়ে চীন ফেরত ৩১২ বাংলাদেশির মধ্যে মোট ১৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। অসুস্থ না হয়েও এক নারী রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে রয়েছেন তার স্বামী ও সন্তান। যদিও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) দাবি, হজক্যাম্পে কোয়ারেনটাইনে (সঙ্গনিরোধ) থাকা সবাই সুস্থ আছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একই কথা জানিয়েছেন।

গত শনিবার বিমান বাংলাদেশের একটি বিশেষ ফ্লাইটে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ৩১২ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনে সরকার। তাদের মধ্যে ২৯৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক, এক বছরের বেশি বয়সি ১২ শিশু ও এক বছরের নিচের ৩ শিশু রয়েছে। বিমানে অসুস্থ হয়ে পরায় ঢাকায় নেমেই ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে অসুুস্থ না হয়েও এক নারী রোগীর সঙ্গে হাসপাতালে যান তার স্বামী ও সন্তান। বাকিদের বিমানবন্দর থেকেই সাতটি বিআরটিসি বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় আশকোনার হজক্যাম্পে। সেখানেই আগামী ১৪ দিন তাদের কোয়ারেনটাইন রাখার কথা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার থেকে হজক্যাম্পে কোয়ারেনটাইনে থাকা ৩০২ জনের মধ্যে পাঁচ জনের ঠাণ্ডা ও সর্দিজ্বর দেখা দেওয়ায় তাদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) ভর্তি করা হয়। এ নিয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৭ জন এবং সিএমএইচে ৬ জন ভর্তি রয়েছেন। অসুস্থ না হয়েও সিএমএইচে ভর্তি থাকা এক নারী রোগীর সঙ্গে রয়েছেন তার স্বামী ও সন্তান। ফলে সব মিলিয়ে এখন হজক্যাম্পে কোয়ারেনটাইনে আছেন ২৯৭ জন। তাদের সঙ্গে আছেন বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে যাওয়া তিন চিকিৎসক ও একজন নার্সও।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় চীন থেকে আসা ৩০২ জনকে বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। গত ২১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত স্ক্রিনিং করা হয়েছে মোট ৫৬৩১ জনের। যাদের স্ক্রিনিং করা হয়েছে তাদের কারও শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়নি। আশকোনার কোয়ারেনটাইন সেন্টারে থাকা সবাই শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সুস্থ আছেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া ৭ জনের অবস্থাও স্থিতিশীল আছে। ইতোমধ্যেই করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমানকে আহ্বায়ক ও ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মঈনুল আহসানকে সদস্য সচিব করে ১৯ সদস্যের কোয়ারেনটাইন ব্যবস্থাপনা কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনে এই কমিটিতে আরও সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে কোয়ারেনটাইনে রাখা বাংলাদেশিদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘আশকোনা হজক্যাম্পে রাখা ব্যক্তিরা ভালো আছেন। তাদের কেউ কারোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। তাদের সাথে দেখা করা যাবে না।’ এ জন্য অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে মন্ত্রী বাংলাদেশে কর্মরত চীনা নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এ মুহূর্তে দেশে না যেতেও আহ্বান জানান।

ঢাকায় এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যায়ে গতকাল ‘মলিকিউল এপিডেমিওলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি অব নবেল করোনা ভাইরাস হাইপস অ্যান্ড হোপস’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাপানের এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রটেও সায়েন্স সেন্টারের বিজ্ঞানী ড. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর। তিনি বলেন, ‘চীন থেকে আসা বাংলাদেশিদের যেভাবে হজক্যাম্পে রাখা হয়েছে সেটা কোয়ারেনটাইন ব্যবস্থা নয়। কোয়ারেনটাইনে প্রত্যেককে পৃথকভাবে রাখতে হয়, যেন একজন আরেকজনের সংস্পর্শে না এসে প্রত্যেকেই নিরাপদে থাকতে পারে। ঢাকার মতো শহরে এ ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই ভাইরাসের টিকা আবিষ্কার হয়েছে বলে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো ফ্রান্সের পাস্তর ইনস্টিটিউট টিকা তৈরিতে কাজ শুরু করেছে। তবে ২০২১ সালের আগে সেটি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে সবাইকে ভাইরাল প্রটেক্টেড মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।

Comment here