ছোট বোন মিমকে যে কারণে হত্যা করে বড় ভাই - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ছোট বোন মিমকে যে কারণে হত্যা করে বড় ভাই

নিজস্ব প্রতিবেদক :রাজধানীর বনানী থানা এলাকার কড়াইল বস্তিতে চাঞ্চল্যকর শিশু মিম (৪) হত্যায় জড়িত একমাত্র আসামি ও নিহতের বড় ভাইকে (১৪) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-১। বাবা-মায়ের ভালোবাসায় ভাগ বসানোই ছিল শিশু মিমের অপরাধ। তাই পথের কাঁটা ভেবে তাকে হত্যা করে বড় ভাই।

র‍্যাব সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার রাজধানীর বনানী থানাধীন কড়াইল বস্তির মো. লিটন মিয়ার শিশু কন্যা মিমকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর নিহতের বাবা বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের  করেন।

ঘটনা সম্পর্কে মিমের বাবা লিটন মিয়া জানান, তিন বছরের বেশি সময় ধরে তিনি সপরিবারে ঢাকায় বসবাস করছেন। তিনি  বনানী এলাকায় পেয়ারা ও আমড়া বিক্রি করেন আর তার স্ত্রী রুপসানা অন্যের বাসায় কাজ করেন। প্রতিদিনের মতো গতকালও তার স্ত্রী রুপসানা সকাল বেলা কাজে চলে যান এবং কিছুক্ষণ পর তিনিও বাসার বাইরে চলে যান। কিছু সময় পর তিনি বাসায় ফিরে মেয়েকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। অনেক খোঁজার পর আশেপাশে কোথাও মেয়েকে না পেয়ে সবশেষে পাশের আল-মদিনা মসজিদের মাইকে বিষয়টি ঘোষণা করে জানানো হয়। পরে মিমকে বাসা থেকে কিছু দূরে একটি গোসলখানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

র‍্যাব-১ এর  অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট  কর্নেল শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘মিম হত্যাকাণ্ডের পর র‌্যাব-১ তাৎক্ষনিকভাবে হত্যাকারীকে খুঁজে বের করতে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় হত্যাকাণ্ডের মাত্র ১০ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। কড়াইল বস্তি থেকে ভিকটিমের বড় ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, সে স্থানীয় আইডিয়াল স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়রত। সে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত নরসিংদীর রায়পুরায় তার নিজ গ্রামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে। এরপর বাবা-মায়ের কাছে ঢাকায় আসে।

আসামির ভাষ্যমতে, ছোট বোন মিম জন্মের পর থেকে তার প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসা কমতে থাকে। যত দিন যায় বাবা-মা তার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন এবং সব ভালোবাসা মিমের দিকে চলে যায়। তার ওপর কারণে-অকারণে চলে বাবার নির্দয় প্রহার। যার দরুণ ছোট বোনের প্রতি তার ক্ষোভ জন্মাতে থাকে এবং সব কিছুর জন্য তাকে দায়ী করে সে। প্রতিদিন বাসায় ফিরে তার বাবা সবার আগে মেয়েকে কাছে ডকে নেন এবং আদর করে তার জন্য বাইরে থেকে নিয়ে আসা সব কিছু খেতে দেন।

সে আরও জানায় যে, বাবা-মা দুজনই তার ছোট বোনের সব আবদার পূরণ করলেও তার বেলায় বিপরীত ঘটনা ঘটে। তাই সে ছোট বোন মিমকে বাবা-মায়ের চোখের আড়াল করার জন্য বিভিন্ন ফন্দি আটতে থাকে যাতে করে সে আগের মতো আদর/ভালোবাসা পেতে পারে। এর জন্য সে সুযোগের অপেক্ষা করতে থাকে।

র‍্যাব আরও জানায়, এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল পাশের মাদ্রাসা থেকে পড়া শেষে বাসায় ফেরার সময় সে তার বাবাকে ঘরের বাইরে যেতে দেখে এবং ঘরে ফিরে মিমকে মিমকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। ঘরে বাবা-মা কেউ না থাকায় এটিকে মোক্ষম সুযোগ মনে করে সে ঘুমন্ত মিমকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং বিছানার নিচে লুকিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে তার বাবা বাসায় ফিরে মেয়েকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে এবং বাসার বাইরে খুঁজতে যান। এই সুযোগে আসামি মিমের লাশ পাশের গোসলখানায় রেখে আসে। গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।

Comment here