জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে ইসি - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে ইসি

আসাদুর রহমান : বাংলাদেশে ছবিসহ ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান পদ্ধতি চালু হয় একযুগ আগে। বিভিন্ন প্রকল্পের অস্থায়ী জনবল দিয়েই চলছে প্রায় ১১ কোটি নাগরিকের তথ্যসংবলিত গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের কর্মকাণ্ড। প্রায় ১৩ বছর কেটে গেলেও জাতীয় তথ্যভাণ্ডারের নিজস্ব কাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিজেদের উদাসীনতায় এখন জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সম্প্রতি এনআইডি কার্যক্রম নিজেদের অধীনে নিতে প্রস্তাব দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো প্রস্তাবটি পর্যালোচনায় পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইসি কিংবা এনআইডি উইংয়ের সঙ্গে কোনো বৈঠক ও মতামত ছাড়াই চলতি সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে চূড়ান্ত মতামত দিতে যাচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত কমিটি।

এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত কমিটির সদস্য ও যুগ্ম সচিব (বিধি ও সেবা এবং আইন) শফিউল আজিম আমাদের সময়কে বলেন, আমরা এ বিষয়ে দুটি মিটিং করেছি। যার যার কাছ থেকে তথ্য নেওয়া দরকার নিয়েছি। আরও একদিন বসে এটা চূড়ান্ত করব। কমিশনের মতামত নেওয়া হবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু তো আইনে আছে। আমরা আইনবিধি পর্যালোচনা করে মতামত দেব। এখানে ব্যক্তিগত মতামত নেওয়া বিষয় নয়, কারণ সব তো আইনে আছে। সুতারাং আমাদের মনে হয় না কারও সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার দরকার আছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেতে পারবে কিনা, সেটার আইনি বিষয়ে পরীক্ষা করা একটি বিষয়। আরেকটি বিষয় হলো- পৃথিবীর উন্নত দেশে হচ্ছে, আমরাও আস্তে আস্তে সেদিকে যাচ্ছি। তবে হঠাৎ করে কিছু করার মতো না। আমাদের শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। আমরা জনগণের সুবিধা-সাংবিধানিক বিষয় আছে, এটা নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কাজ করে। সব মিলিয়ে আমরা বসেছি। রবিবার বসে চূড়ান্ত করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর ফাইল তুলব। অনুমোদন হলে আগামী সপ্তাহেই পাঠিয়ে দিব।

সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্র্ভুক্তকরণ, দ্বৈত ভোটার করা, একজনের এনআইডি অন্যের নামে সংশোধন করে সম্পত্তি বিক্রিসহ এনআইডি নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। গত ৭ বছরে বিভিন্ন অনিয়মের ঘটনায় ৪০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এমন প্রেক্ষাপটে এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম নিজেদের অধীনে নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এমন প্রস্তাবের সামগ্রিক বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মতামত চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। মতামতের জন্য অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও বিধি অনুবিভাগ) সোলতান আহমদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি গঠনের অফিস আদেশের কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের বদলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম স্থানান্তরের চ্যালেঞ্জসমূহ নির্ণয় ও মোকাবিলার কৌশল সুপারিশ করা, এরূপ স্থানান্তরে কী কী আইন, বিধি ও অবকাঠামো পরিবর্তন করার প্রয়োজন তা নিরূপণ করা এবং এ রূপান্তরে ফলপ্রসূ ফল আসবে কিনা, তা মূল্যায়ন করা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, পুরো বিষয়টি আইনি। কার আইনে কী আছে, কার অথরিটি কী, সবকিছুই আইনে বলা আছে। সাংবিধানিক, ভোটার আইডি আইন ও পাসপোর্ট আইনসহ অন্যান্য আইন, বিধিবিধান পর্যালোচনা করছে কমিটি।

এদিকে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, এনআইডির সঙ্গে ভোটার কার্যক্রম সম্পৃক্ত। এনআইডি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা অনেক দক্ষ হয়ে গেছেন। নতুন করে এনআইডির দায়িত্ব অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিলে সরকারের বাড়তি খরচ হবে। এক কাজ দুই প্রতিষ্ঠান করলে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি। এতে ব্যক্তির গোপনীয়তাও লঙ্ঘিত হতে পারে। এনআইডির মিসইউজও হবে। মানুষের ভোগান্তি বাড়বে।

১৯৭২ সালের সংবিধানে নির্দিষ্টভাবে কমিশনের জন্য ভোটার তালিকা তৈরির কাজ বরাদ্দ করেছিল। ২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়। ২০১০ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনের ৬ ধারা বলেছে, ইসি ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা, পরিচয়পত্র প্রস্তুতকরণ, বিতরণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক সকল দায়িত্ব’ পালন করবে। ২০১১ সালের জুলাইয়ে বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং এক্সেস টু সার্ভিস’ আইডিইএ প্রকল্পের আওতায় নয় কোটি নাগরিককে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার চুক্তি হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। পরে বেশ কয়েক দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, যা এখনো চলমান। সেই প্রকল্পের প্রায় দেড় হাজার অস্থায়ী জনবল দিয়েই চলছে এনআইডি উইংয়ের কার্যক্রম। ২০১৩ সালে কাজী রকিব কমিশন এক সভায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষে দক্ষ জনবল রাজস্ব বাজেটে স্থানান্তরসহ জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ পুনর্গঠনে মত দেন। তবে তা এখনো কার্যকর হয়নি।

 

Comment here