নিজস্ব প্রতিবেদক : খুনিদের মদদদাতাদের স্থান বাংলার মাটিতে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজাকার, খুনি, আলবদর, আলশামস এবং খুনিদের মদদদাতাদের স্থান বাংলার মাটিতে ভবিষ্যতে আর কোনোদিন হবে না। বাংলাদেশের মানুষকে সেইভাবে চিন্তা করতে হবে। দেশ যেন আবার খুনিদের রাজত্ব না হয়।’
বঙ্গবন্ধু হতাকাণ্ড, জেলহত্যাকাণ্ডের বিচার যেমন হয়েছে তেমনি আগামীতে জেলহত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার হবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি।
১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাতের আঁধারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিচক্র নির্মমভাবে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে হত্যা করে। যারা বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করে জাতির জন্য বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকার অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দেয় না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের সমর্থন নিয়ে আমরা বারবার সরকারে এসেছি বলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করতে পেরেছি, তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে পেরেছি। জাতির পিতার হত্যার বিচার করে কার্যকর করেছি। ৩ নভেম্বর হত্যার বিচার করেছি। রায় কার্যকর করেছি। এখনো যে কয়টা খুনি এখানে সেখানে পালিয়ে আছে তাদেরও আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’
সরকাপ্রধান বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী ও খুনিদের বিচার হয়েছে, সাজা হয়েছে। কিন্তু এদের যারা দোসর; হয়তো আমরা আজকে তাদের বিচার করে যেতে পারলাম না। কোনো না কোনো দিন এদের বিচার হবেই। কারণ, ইতিহাস কখনো মুছে ফেলা যায় না। হয়তো এমন একদিন আসবে এই ষড়যন্ত্রকারীরা ধরা পড়বে। তাদের এই রহস্য উদঘাটন অবশ্যই হবে। কেউ না কেউ এটা করবেই। বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলেছিল ২১ বছর পর আবার ফিরে এসেছে। আবার সময় আসবে।’
জেলহত্যা দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় ছিল ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শুধু একটা পরিবারের ঘটনাই বলা হতো। কিন্তু ৩ নভেম্বরের পর থেকে মানুষের কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল এটা ছিল সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক এবং স্বাধীনতবিরোধীদের কাজ। কারণ তারা প্রতিশোধ নিয়েছিল। বাংলাদেশ কেন স্বাধীন হলো? তার প্রতিশোধ। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে যেন বাংলাদেশ টিকতে না পারে সেজন্য এই হত্যাকাণ্ড।’
জেলহত্যার বিচারের সময়কার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯৬ সালে আমরা এদের বিচার করি। ২০০১ এ সেই বিচারের রায় ঘোষণার তারিখ ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই খায়রুজ্জামানসহ এই ধরনের খুনিদের আবার পুনরায় সেই ফরেন সার্ভিসে চাকরি দেয়। এমনকি বিদেশি দূতাবাসেও তাদের কাউকে দিয়ে যায়। মামলার রায় হবে ওই সময় চাকরি শুধু না, সাথে সাথে প্রমোশনও দেয়। এক খুনি বিদেশে মারা যায়। তার মৃত্যুর পর তাকে প্রমোশন দিয়ে তার অবসর ভাতা সবকিছু দিয়ে দেয় তারা। মৃত ব্যক্তিকেও খালেদা জিয়া প্রমোশন দিয়ে গেছে; খুনি পাশাকে। এই জাতীয় অন্যায় অবিচার তারা করে গেছে।’
বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘একটা দল তার চেয়ারপারসন এতিমের অর্থ আত্মসাতে জেলে। আবার ভারপ্রাপ্ত যাকে করল, বাংলাদেশে এত নেতা থাকতে বিএনপির নেতার এতই অভাব হয়ে গেল যে, একজন নেতা পেল না আরেক সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং যে পলাতক; তাকে বানাল ভারপ্রাপ্ত। বিএনপির নেতৃত্বের এত অভাব। আমি জানি না, যারা বিএনপি করে তাদের কোনো মেরুদণ্ড আছে কি না, আত্মমর্যাদা আছে কি না সেটাই আমার সন্দেহ।’
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন, আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বক্তব্য দেন। লেখক হিসেবে বক্তব্য দেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
Comment here