জ্বালানির দাম সমন্বয়ে রাখাই উদ্দেশ্য - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

জ্বালানির দাম সমন্বয়ে রাখাই উদ্দেশ্য

লুৎফর রহমান কাকন : কেবল দাম বাড়াতেই বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) আইন সংশোধন করা হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে সময়ে সময়ে দাম ‘সমন্বয় করার জন্য’ তা করা হয়েছে। অর্থাৎ যখন প্রয়োজন দাম বাড়বে, আবার যখন প্রয়োজন দাম কমবে। জ্বলানি ও বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আইন সংশোধন মূলত করা হয়েছে জ্বলানির মূল্য প্রতিনিয়ত সমন্বয়ের লক্ষ্যে। বর্তমান প্রক্রিয়ায় এ জন্য ৯০ দিন সময় লাগে। অথচ বিশ্ববাজারে জ্বলানি পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত ওঠানামা করে। মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতি মুহূর্তে না হোক অন্তত মাসে মাসে দাম সমন্বয়ের। একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় জ্বলানি পণ্যে ভর্তুকি থেকেও সরে আসতে চায় সরকার। এ আইনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দাম সমন্বয়ের ক্ষমতা রাখবে মন্ত্রণালয়।

জ্বলানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, দরকার হলে দাম যেমন বাড়বে, তেমনি আবার কমবেও।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম সমন্বয় (বাড়ানো-কমানো) করার ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের কাছে রাখতে বিইআরসি আইন সংশোধন করছে জ্বলানি বিভাগ। যা এতদিন বিইআরসির একক ক্ষমতায় ছিল। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

এদিকে বিইআরসির আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে বিইআরসির ক্ষমতা কমিয়ে আনা হলো কিনা জানতে চাইলে কমিশনের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল আমাদের সময়কে বলেন, বিষয়টি আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমরা কোনো লিগ্যাল চিঠি বা অফিসিয়ালি অবহিত হইনি। বিইআরসির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কোনো আবেদন করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কোনো মতামত থাকলেও সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর সরকারকে জানানো হবে।

এর আগে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২২’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একটি সারসংক্ষেপ মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য পাঠান জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এতে বলা হয়, অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখার সঙ্গে নিয়মিত ও দ্রুততম সময়ে মূল্য সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিইআরসির পাশাপাশি সরকারেরও ক্ষমতা সংরক্ষণের জন্য আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আরও বলা হয়, যেহেতু বর্তমানে সংসদ অধিবেশন নেই এবং আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে, সেহেতু উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বর্তমান আইনে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের ট্যারিফ/মূল্য সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিইআরসির পাশাপাশি সরকারেরও ক্ষমতা সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিধান সংযোজনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করতে পারেন।

মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এখানে বিইআরসি সব (দাম সমন্বয়) হ্যান্ডেল করে। কিন্তু বিইআরসির কিছু কিছু জায়গায় একটু প্রবলেম হয়, যেমন ৯০ দিন পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত না দিয়ে থাকতে পারে। কারণ আইনে বলা আছে বিইআরসি ৯০ দিনের মধ্যে এগুলো সব শুনানি নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। অনেক সময় আমাদের ইমিডিয়েট প্রয়োজন আসে, অনেক সময় তারা ঠিকভাবে ইয়ে (সমন্বয়) করতে পারে না।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, স্বাভাবিকভাবে দাম সমন্বয়ের কাজ বিইআরসি কমিশনই করবে। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে সরকার এ ক্ষেত্রে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবে।

এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জ্বলানি পণ্যের বাজার আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার উদ্যোগ ইতোমধ্যে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিশ্ববাজারে জ্বলানি পণ্যের দাম বিশেষ করে জ্বলানি তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ফলে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও বাড়বে, আবার দাম কমলে দেশের বাজারেও কমবে। সরকারের আইন সংশোধনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে দাম কমানো বা বাড়ানোর।

সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বিদ্যুৎ জ্বলানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এখন আস্তে আস্তে ভর্তুকি থেকে সরে আসতে হবে। আমরা ওপেন মার্কেটে কবে নাগাদ যেতে পারব সে বিষয়ে ভাবছি। বিভিন্ন দেশের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে যাচাই বাছাই করছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ওপেন মার্কেটব্যবস্থা চললে সরকারের সাধারণত তখন ভর্তুকির বিষয় আসে না। দায় দায়িত্ব তখন সরকারের কাঁধে সেভাবে থাকে না। ফলে মার্কেটের ওপর ছেড়ে দেওয়া ভালো হবে। মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিলে সুবিধা আছে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমবে তখন দেশের বাজারেও জ্বলানির দাম কমবে। মার্কেট নিজ থেকেই দাম কমিয়ে দেবে। তিনি বলেন, পার্শবর্তী দেশ তাদের অনেক স্টেটে এ পলিসিতে চলে গেছে। প্রায় দেশই এ পলিসিতে চলে গেছে।

 

Comment here