টাকার অবমূল্যায়নে ক্ষতির মুখে বিদেশি এয়ারলাইনস - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

টাকার অবমূল্যায়নে ক্ষতির মুখে বিদেশি এয়ারলাইনস

তাওহীদুল ইসলাম :ডলারের বিপরীতে টাকার মান ক্রমাগত কমছেই। এ কারণে দেশে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। যাত্রী ও পণ্যপরিবহনে উপার্জিত অর্থ সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠাতে গিয়ে এ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হওয়ার কথা।

advertisement

যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি বাবদ যে অর্থ আয় হয়, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে প্রতি তিন মাস অন্তর সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসের সদরদপ্তরে পাঠায় জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ)। পণ্যপরিবহন বাবদ অর্জিত অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। দুই মাসের ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় সংকটে পড়েছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো।

advertisement

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দূতাবাসের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখানে আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে দুদফা চিঠি দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও অংশ নেবেন। ডলারের বিক্রয়মূল্য এবং বিদেশি এয়ারলাইনস কর্তৃক অর্জিত লভ্যাংশ প্রেরণের ক্ষেত্রে প্রকৃত ডলারের মূল্যের পার্থক্যের কারণে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতির বিষয়টি পর্যালোচনা এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের জন্য বৈঠকটি হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশি তিনটিসহ ৩৩টি বিদেশি এয়ারলাইনস দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব এয়ারলাইনস দৈনিক গড়ে ১৫ হাজার যাত্রী পরিবহন করে। এর বেশিরভাগই বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর দখলে। এর মধ্যে বড় একটা অংশ মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক। বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। দুই মাস আগে যে এক্সচেঞ্জ রেটে টিকিট বিক্রি করা হয়েছিল, সেটি এখন আর নেই। বর্তমানে রেমিট করতে গিয়ে ডলারপ্রতি ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতি হচ্ছে এয়ারলাইনসগুলোর। যে এয়ারলাইনস যত বেশি টিকিট বিক্রি করেছে তার ক্ষতির পরিমাণও তত বেশি।

advertisement

সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাসের পক্ষ থেকে ২৩ জুন পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, আমিরাতভিত্তিক এয়ারলাইনস অপারেটরগুলো বাংলাদেশে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই সমস্যা দেখা দিয়েছে টাকা থেকে ডলারে রূপান্তর করতে গিয়ে। বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে টিটি ক্লিন রেট এক্সচেঞ্জ নিয়ে এ বিপত্তি। এই ক্ষতি পোষাতে প্রস্তাবও দিয়েছে তারা। দৈনিক ভিত্তিতে মার্কেট রেট নির্ধারণ করে তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিক্রয় হার বিবেচনা করা যেতে পারে। এ জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরা যায়, কোনো হোটেল যদি ১ ডলারে ১০০ টাকা ধরে সেটি মডেল হিসেবে ধরতে পারে এয়ারলাইনসগুলো। এটি নির্ধারিত সময়ের জন্য প্রযোজ্য হবে। তবে সত্যিকার অর্থে এ সমস্যা সমাধানে করণীয় কী হবে, তা নির্ধারণ করতে হবে মন্ত্রণালয়কেই। এ জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, সমস্যা কী হচ্ছে, করণীয় কী- সব শুনে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর হয়ে বাংলাদেশে টিকিট বিক্রির কাজটি করে তাদের নিয়োজিত জিএসএ। যাত্রার কয়েক মাসে আগেই টিকিট কেনা হয়। কারণ আগে টিকিট কিনলে খরচ কম। এটাই অ্যাভিয়েশন খাতের প্রচলিত নিয়ম। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় বর্তমানে টিকিট বিক্রির অর্থ নিজ দেশে নিতে ডলারপ্রতি ১০-১৫ টাকা পর্যন্তও লোকসান হচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর। অর্থাৎ কোনো বিদেশি এয়ারলাইনস যদি ডলারপ্রতি এক্সচেঞ্জে ১০ টাকা লোকসান দেয়, তাহলে ১০ লাখ ডলার পাঠাতে তার ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১ কোটি টাকা। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যেসব এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বেশি তাদের ক্ষতির পরিমাণও বেশি। এভাবে আর্থিক ক্ষতির বিষয় তুলে ধরে গত ১১ জুন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান বোর্ড অব এয়ারলাইনস রিপ্রেজেনটেটিভস বাংলাদেশ।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এরিয়া ম্যানেজার-বাংলাদেশ মোহাম্মদ আলহাম্মদি জানিয়েছেন, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এতে নেচিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক ডাকার অনুরোধ করেছেন তিনি। এর আগে ১২ মে পাঠানো চিঠিতে বেবিচকের কাছে সমস্যার কথা বিস্তারিত তুলে ধরে এই বোর্ড।

একটি সূত্র জানায়, প্রতি ডলারের বিপরীতে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের বেঁধে দেওয়া এক্সচেঞ্জ রেট হচ্ছে ৮৬ টাকার কিছু বেশি। এ কারণে ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো যেসব টিকিট বিক্রি করে তার বিপরীতে এয়ারলাইনসগুলো আয়াটা থেকে কমিশন বাদ দিয়ে ডলারপ্রতি পায় প্রায় ৮৬ টাকা। কিন্তু টিকিট বিক্রির এ অর্থ যখন জিএসএগুলো বিদেশে পাঠাতে যায় তখন মার্কেটে যে এক্সচেঞ্জ রেট থাকে তাতেই কিনতে বাধ্য হয়। গত মাসে জিএসএগুলোকে বিদেশে টিকিট বিক্রির অর্থ পাঠাতে হয়েছে ডলারপ্রতি ৯০ টাকা এক্সচেঞ্জ রেটে। সে সময়ই ডলারপ্রতি ৪-৫ টাকা করে লোকসান দিতে হয়েছে তাদের। চলতি মাসে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আরও বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রতি ডলার কিনতে ১০০ টাকারও বেশি প্রয়োজন হয়েছে জিএসএগুলোর।

Comment here