ট্রেন মিস করা সেই কিশোরী ফের ‘ধর্ষণের’ শিকার - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

ট্রেন মিস করা সেই কিশোরী ফের ‘ধর্ষণের’ শিকার

লালমনিরহাট প্রতিনিধি : লালমনিরহাটে ট্রেন মিস করার পর গণধর্ষণের শিকার সেই কিশোরী (১৬) ফের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।জেলার পাটগ্রাম উপজেলার ওই কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে একই উপজেলার রবি মিয়া (১৮) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাটগ্রাম থানায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার মহন্ত। তিনি বলেন, ‘এর আগে গত ৯ অক্টোবর এই কিশোরী কালীগঞ্জের কাকিনায় গণধর্ষণের অভিযোগ তুলে ইউপি সদস্যসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে একটি গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেছিলেন। যা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়।গতকাল বৃহস্পতিবার ফের ধর্ষণ মামলা দায়ের করতে এসে আগের গণধর্ষণের ঘটনাটি অস্বীকার করলেও পরে তা স্বীকার করেছে ওই কিশোরী।’

গতকাল বৃহস্পতিবার দায়ের করা মা্মলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পাটগ্রাম উপজেলার ওই কিশোরী একই উপজেলার কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের কেরারটারী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে গত বুধবার সন্ধ্যায় তার বোন ও দুলাভাই বাড়িতে না থাকার সুযোগে প্রতিবেশী রবি মিয়া ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করেন। ভুক্তভোগীর বোন বাড়িতে এসে তাকে উদ্ধার করেন। এসময় অভিযুক্ত রবি পালিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পাটগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই কিশোরী।

 

ওসি সুমন কুমার মহন্ত বলেন, ‘ভুক্তভোগী তার বোন জামাইসহ থানায় এসে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।’ এ মামলার পলাতক আসামি রবিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

এর আগে গত ৯ অক্টোবর করা মামলার বিবরণীতে জানা যায়, গত ৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় লালমনিরহাটগামী আন্তঃনগর করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেনে কাউনিয়ার উদ্দেশে রওনা হয় ওই কিশোরী। ট্রেন কালীগঞ্জের কাকিনা স্টেশনে দাঁড়ালে ওই কিশোরী নাস্তা করতে নামে। সে সময় রকি (২২) নামে এক যুবক কিশোরীর কাছে জানতে চান সে কোথায় যাচ্ছে। তখন মেয়েটি তাকে কাউনিয়া যাচ্ছে বলে জানায়। রকিও নিজেকে কাউনিয়ার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। এরই মধ্যে ট্রেন স্টেশন থেকে ছেড়ে গেলে রকি অটোরিকশায় করে কাউনিয়া যাবেন এবং সেই অটোরিকশায় মেয়েটিকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক একটি অটোরিকশায় রকি ওই কিশোরীকে নিয়ে কাউনিয়া যাওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মধ্য রাতে একটি সেচ পাম্পের নির্জন ঘরে নিয়ে যান। সেখানে রকি ও তার তিন বন্ধু মিলে কিশোরীকে গণধর্ষণ করেন

পরদিন ৭ অক্টোবর সকালে মুখ না খোলার শর্তে কিশোরীকে মুক্তি দেন ওই চার যুবক। পরে অসুস্থ অবস্থায় কিশোরী পথ ভুলে চলার পথে স্থানীয়রা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মেয়েটি তাদের কাছে বিষয়টি খুলে বলে। তারপর স্থানীয়দের সহায়তায় এক গ্রাম পুলিশ সদস্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয় মেয়েটি। ৮ অক্টোবর রাতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মাতব্বররা বৈঠকে বসে ধর্ষণকারী যুবকদের শনাক্ত করে মোটা অংকের টাকা জরিমানা আদায় করেন। তবে কিশোরীর অভিযোগ, টাকাগুলো তাকে না দিয়ে নিজেদের পকেটেই রাখেন মাতব্বররা।

জরিমানার টাকা কিশোরীকে না দিয়ে উল্টো তাকে হুমকি দিয়ে পথ খরচ দুই হাজার টাকা দিয়ে মাতব্বররা তাকে পাঠিয়ে দেন বলেও অভিযোগ করে মেয়েটি। পরে ৯ অক্টোবর দুপুরে স্থানীয়দের মাধ্যমে কিশোরী কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবে আশ্রয় নেয়। প্রেসক্লাবে ঘটনার লোমহর্ষক এ বর্ণনা শুনে সাংবাদিকরা থানায় জানায়। এর পরপরই কিশোরীকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নেয় কালীগঞ্জ থানা পুলিশ এবং পরে মেয়েটির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক তদন্ত করে মূলহোতা রকিকে আটক করে। রকির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই কিশোরী বাদী হয়ে সাতজন ধর্ষক, ইউপি সদস্যসহ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ আরও চার-পাঁচ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা নেয় পুলিশ।

 

Comment here