নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির তালিকা প্রণয়ন এবং ত্রাণ বিতরণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই প্রস্তাব করেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আমার প্রস্তাব যে, আজকে ত্রাণণ যাতে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে সেজন্য তালিকা সম্প্রসারণ করতে হবে। সরকারের কাছে ভিজিডি-টিআর-বৃদ্ধ-মুক্তিযোদ্ধাদের লিস্ট সকল এলাকার আছে। এখন যারা খেটে খাওয়া মানুষ, যারা নিম্নমধ্যবিত্ত এবং যারা গরিব তাদেরকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব। যদি সরকার সেনাবাহিনীসহ সশ্বস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীকে এই দায়িত্ব পুরোপুরি দেন যেন তারা চিরনি অভিযান করে সারা বাংলাদেশে এই তালিকাটা তৈরি করবে। এরপরের থেকে যত রকমের সাহায্য, যত রকমের ত্রাণ, ভিজিএফ-ভিজিডি, ত্রাণ এবং বয়স্কভাতা সব কিছু সেনাবাহিনীসহ সশ্বস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে এবং পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে সরাসরি যদি বিতরণ করা হয় তাহলেই আজকে মানুষকে আমরা এই অবস্থা থেকে বাঁচাতে পারব।’
‘করোনাভাইরাস থেকে বাঁচানো যেমন আমাদের দায়িত্ব তেমনিভাবে না খেয়ে মানুষ যাতে না মরে সেটার দায়িত্ব প্রথম সরকার এবং আমাদের সকলকে এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে’ বলেন তিনি।
ত্রাণ বিতরণে অব্যবস্থাপনা ও ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘যেভাবে বর্তমান সরকার যে মাধ্যমে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করছে, এটা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেখানে চাল চুরির হিড়িক লেগেছে। কারা করছেন? চেয়ারম্যান-মেম্বার-উপজেলা চেয়ারম্যানরা। তারা কারা? তারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তারা গত ১২ বছর ধরে এসব কর্মকাণ্ডের সাথে অভ্যস্ত। তাদের দিয়ে এই কাজ করা সম্ভব হবে না। সরকার এটা উপলব্ধি করতে পেরে গতকাল তারা ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) ছিল, সেই ওএমএস তারা বন্ধ করে দিয়েছে। এটা বন্ধ করে দিলে হবে? এই মার্কেট থেকে যারা ক্রয় করে তারা হচ্ছে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্য বিত্ত।’
করোনাভাইরাস সংক্রামণ পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমি আগেও বলেছিলাম, যত টেস্ট করা যাবে আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা, আক্রান্তের সংখ্যা ততই বেশি পাওয়া যাবে। আমরা এটা অবহেলা করায় আসলে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। যে ব্যক্তিটি চিহ্নিত ছিল সে কিন্তু অনেকে সংক্রামিত করে ফেলেছে। এই বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি বলতে চাই, আমাদের পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে যে, আমাদের বর্তমানে টেস্ট করার সক্ষমতা ৫ হাজার জনকে। আমরা কিন্তু তাও করছি না। এ ব্যাপারে সরকার কোনো ব্যাখ্যাও দিচ্ছেন না। আমি আবারো প্রত্যাশা করব যাতে করে এই টেস্ট বা পরীক্ষা আরও বেশি সম্প্রসারিত করা হয়, আরেও বেশি সংখ্যায় করার ব্যবস্থা করা যায়। তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে আক্রান্তের সংখ্যা কত এবং কতজন মৃত্যুবরণ করেছে।’
হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটর স্থাপনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র হাসপাতাল প্রস্তুত করার খবর পাচ্ছি। কিন্তু আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর স্থাপন করার সুযোগ যদি সৃষ্টি করা না হয় তাহলে এই হাসপাতালগুলো কোনো কাজে আসবে না।’
করোনাভাইরাসে চিকিৎসা সম্পর্কে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আজকে করোনাভাইরাসকে মোকাবিলায় সম্মুখভাগে যুদ্ধ করছেন যারা তাদের মধ্যে প্রথম হচ্ছেন চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী। তারপরে আমাদের সশ্বন্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী আছেন তারা রাস্তায় সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত। আমরা দেখতে পারছি ১০ জন চিকিৎসক ও ৪১ জন নার্স এই পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। আমাদের সকলের প্রয়োজন তাদেরকে উৎসাহিত করা, তাদের মনোবলকে বৃদ্ধি করা, তাদের প্রণোদনা দেওয়া, তাদেরকে যা কিছু প্রয়োজন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তা সরবারহ করা।’
‘আজকে আমাদের মানুষকে বাঁচাতে হয় তাহলে যারা সম্মুখ যুদ্ধে যারা অবতীর্ণ, তাদেরকে পর্যাপ্ত প্রণোদনা, তাদেরকে পর্যাপ্ত উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, কারো কারো অবহেলার কারণে আমরা দেখছি যে, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কুৎসা রটানো হয়, নানা রকমের মন্তব্য করা হয়। এমনকি ইতিমধ্যে ৬ জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এটা চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীর মনোবল ভেঙে দেবে। আমি আশা করি যে, তাদের প্রতি ভালো আচরণ করে তাদেরকে উৎসাহিত করে দেশপ্রেমে উদ্ধুব্ধ করে জনস্বার্থে তাদেরকে মাঠে রাখা প্রয়োজন। এজন্য যা করা প্রয়োজন তা আমাদের করতে হবে’, বলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা।
Comment here