বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘দেশে চলমান দুঃশাসনে এমন এক অস্বাভাবিক ও নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যেখানে অপরাধ করলেও দলীয় বিবেচনায় প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। যার ফলে অপরাধীরা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে নতুন নতুন অপরাধ করতেই থাকে। দেশ আজ যেন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।’
আজ সোমবার এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন মির্জা ফখরুল। এতে নিরপেক্ষ তদন্তে অবিলম্বে দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এই ঘটনা শুধু ন্যাক্কারজনকই নয়, তা রহস্যজনক, পূর্বপরিকল্পিত এবং কলঙ্কজনক। এর নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জল দৃষ্টান্ত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মন্দির, প্রতিমা ভাংচুর করে যারা সাম্প্রদায়িক ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায় তারা নরকের কীট।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বালিয়ডাঙ্গীর ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, নিরপেক্ষ তদন্ত করে তা খুঁজে বের করতে হবে। আমি অবিলম্বে বালিয়াডাঙ্গীর মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ একইসঙ্গে এই ঘটনায় ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশত নিরীহ মানুষকে যেন হয়রানি না করা হয় সে দিকে প্রশাসনকে সতর্ক থাকা’র আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
গত শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর রাত পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৪টি মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় সমগ্র এলাকায় হিন্দু, মুসলমানদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে যা সামাজিক সম্প্রীতির অন্তরায়। যে সব মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তার বেশিরভাগই সড়কের পাশে স্থাপিত ছিল। রাতে সাধারণত টহল পুলিশ থাকে।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুপস্থিতিও রহস্যজনক। তাদের গাফিলতিতে দুর্বৃত্তরা অনায়াসে এত বিপুল সংখ্যক মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটাতে পেরেছে বলে সাধারণের ধারণা। সরকার এর দায় এড়াতে পারে না।’
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জনগণ আজ চরম নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড তো বটেই, সামাজিক ও ধর্মীয় কাজও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এর আগেও মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয়ও উপাসনালয়েও হামলা হয়েছে। সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে পারে নাই।’
ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় যখনই হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি-সম্পদ, বাড়ি, ব্যবসা দখল, মন্দির, প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে সেসব ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এর আগেও বালিয়াডাঙ্গীতে ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও তার পরিবারের সদস্য এবং তার অনুগত লোকজন শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল নয় তাদের ওপর হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। তখনও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয় হয়নি।’
অবিলম্বে সরকারি খরচে প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ মন্দির পুণঃনির্মাণ করার দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
Comment here