দিনাজপুরে ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
শিক্ষাঙ্গন

দিনাজপুরে ৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল

দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৭১.৭৮ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে চার হাজার ৪৯ শিক্ষার্থী। পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তির এই সংখ্যা গত পাঁচ বছরের ফলাফলে সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি বেড়েছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, সেইসঙ্গে কমেছে একজনও পাস করতে পারেনি এমন প্রতিষ্ঠান।

বুধবার দুপুরে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অডিটরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তোফাজ্জুর রহমান।

এ সময় বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আব্দুর রাজ্জাক, বিদ্যালয় পরিদর্শক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হারুনুর রশিদ মণ্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, এবারে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৮টি জেলার মোট ৬৫৮টি কলেজের ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৯ শিক্ষার্থী ১৯৯টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন। পাস করেছেন ৮৯ হাজার ২৩৩ জন বা ৭১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৫ সালে এখানে পাসের হার ছিল ৭০.১৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৭০.৬৪, ২০১৭ সালে ৬৫.৪৪, ২০১৮ সালে ৬০.২১ আর এবার ৭১.৭৮ শতাংশ। ২০১৫ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন ২ হাজার ৩৯৫, ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৮৯৯, ২০১৭ সালে ২ হাজার ৯৮৭, ২০১৮ সালে ২ হাজার ২৯৭ এবং চলতি বছরে পেয়েছেন ৪ হাজার ৪৯ জন।

এবার এই বোর্ডের ফলাফলে পাসের হারে ছাত্ররা পিছিয়ে থাকলেও জিপিএ ৫-এ তারা এগিয়ে আছেন। পাসের হারে এগিয়ে আছেন ছাত্রীরা। এ বোর্ডে ছাত্র ও ছাত্রীর পাসের হার যথাক্রমে ৬৮.৩৭ ও ৭৫.৩৯ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২ হাজার ২৭২ জন ছাত্র। অন্যদিকে ছাত্রীদের মধ্যে পেয়েছেন এক হাজার ৭৭৭ জন। মোট ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউই পাস করতে পারেননি। তবে শতভাগ পাস করেছেন ২০টি প্রতিষ্ঠান থেকে। এই বোর্ডে শুধু ইংরেজিতেই অকৃতকার্য হয়েছেন ২৯ হাজার ৬৮ শিক্ষার্থী।

পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এবার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করেছেন। বিজ্ঞান বিভাগে ২৮ হাজার ২৫৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ২২ হাজার ৭৭৫ জন। এই বিভাগে পাসের হার ৮০ দশমিক ৬১ শতাংশ। মানবিক বিভাগে ৮০ হাজার ৪৩৫ জনের মধ্যে পাস করেছেন ৫৫ হাজার ৮২৫ জন, পাসের হার ৬৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ১৫ হাজার ৬২৬ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছেন ১০ হাজার ৬৩৩ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক ০৫ শতাংশ।

ভালো ফলে এগিয়ে রংপুর: দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এবারও ভালো ফল করেছেন রংপুর জেলার শিক্ষার্থীরা। এই জেলায় পাসের হার ৭৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২ হাজার ২৬৬ শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নীলফামারী।

এই জেলায় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ, জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪৭৮ জন। ৭৩ দশমিক ১২ শতাংশ পাসের হার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে গাইবান্ধা জেলা। এই জেলায় জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২৮৩ শিক্ষার্থী। পাসের হারের দিক থেকে চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে লালমনিরহাট (৭২,০৫%), কুড়িগ্রাম (৭১.১৭%), দিনাজপুর (৭০.২২%), ঠাকুরগাঁও (৬৭.৭৩%) এবং পঞ্চগড় (৫৭.৯৮%)। দিনাজপুর জেলায় জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি- ৬৯৫ জন। আর সবচেয়ে কম পঞ্চগড়ে- ২৯ জন।

শতভাগ পাস ২০ প্রতিষ্ঠানে: এবার শতভাগ পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০টি। ২০১৫ সালে এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ২২টি। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ছিল ১১টি করে। ২০১৮ সালে ছিল ১৪টি।

সবাই অকৃতকার্য সাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে: এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের সাতটি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউই পাস করতে পারেননি। ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এ বোর্ডে এমন প্রতিষ্ঠান ছিল যথাক্রমে ৫টি, ৮টি, ১৬টি ও ১২টি। তবে এবারে তা কমে হয়েছে ৭টি।

শূন্য শতাংশ পাস করা এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তোফাজ্জুর রহমান। তিনি জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যাও অনেক কম। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার আলহাজ তমিজউদ্দিন কলেজ, কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার সিঙ্গার দাব্রিরহাট বিএল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ঘনশ্যাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, একই জেলার আদিতমারী উপজেলার নামুরি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার পীরগঞ্জ আদর্শ কলেজ, দিনাজপুর জেলার বিরামপুর উপজেলার ব্যাপারীতলা আদর্শ কলেজ ও গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা এমএম আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তোফাজ্জুর রহমান জানান, এবার এ শিক্ষা বোর্ড থেকে মোট ১ লাখ ২৪ হাজার ৩১৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছেন ৩৫ হাজার ৮২ জন। এর মধ্যে শুধু ইংরেজিতেই ফেল করেছেন ২৯ হাজার ৬৮ পরীক্ষার্থী।

তিনি জানান, নির্বাচনী পরীক্ষায় শুধু নির্বাচিত পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় ফরম পূরণের সুযোগ দেওয়ার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নজরদারির কারণেই এবার পাসের হার বেড়েছে।

Comment here