মো. হাবিবুর রহমান,মুরাদনগর : পায়ের নূপুর, নাকে নোলক এবং মেহেদী কিনে দেওয়ার প্রলোভনে দুই মেয়েকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগ উঠেছে বাবা ও সৎ মায়ের বিরুদ্ধে। তাদের গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ময়নাতদন্তের জন্য হত্যার শিকার স্বর্ণা আক্তার (১১) ও ফারিয়া আক্তারের (৫) লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (কুমেক) মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ওই শিশুদের আপন মা সোনিয়া আক্তার।
সন্তান হত্যা ও লাশগুমের বিষয়ে করা মামলার এজাহারে সোনিয়া উল্লেখ করেন, গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঈদ উপলক্ষে পায়ের নূপুর, নাকে নোলক এবং মেহেদী কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্বর্ণা ও ফারিয়াকে ডেকে নিয়ে যায় রুনা বেগম। ইফতারের পরও তারা বাড়ি না আসায় সোনিয়া তার সতীনের বাড়ি যায়। এ সময় রুনার শরীরে কাপড় ভেজা দেখে তার সন্দেহ হয়।
এজাহারে লেখা হয়েছে, রুনার শরীর ভেজা দেখার পর গ্রামের বিভিন্ন পুকুরে খোঁজা-খুজি শুরু করেন সোনিয়া। পরে রব্বান মিয়া নামে এক স্থানীয়ের ডোবায় তার সন্তানের জুতা ভাসতে দেখে চিৎকার শুরু করেন। এলাকাবাসী ছুটে এসে ডোবায় খোঁজ চালিয়ে স্বর্ণা ও ফারিয়াকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে তাদের মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বর্ণা ও ফারিয়াকে মৃত ঘোষণা করে।
সোনিয়া দৈনিক আমাদের সময়কে জানান, ঘটনাটি এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। পরে তারা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও স্থানীয়দের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্বামী সুমন ও সতীন রুনাকে থানায় নিয়ে যায়।
নিহত শিশুদের মা আরও জানান, ৩ বছর আগে তাকে না জানিয়ে রুনাকে বিয়ে করেন সুমন। তার ঘরে না রেখে স্থানীয় বাতেন মিয়ার বাড়িতে রুনাসহ ভাড়া থাকতেন তিনি। সুমন তার ও সন্তানদের কোনো খোঁজ-খবর রাখতেন না। বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে গ্রামে মুরগির ফার্ম দেন সোনিয়া। সেই টাকা দিয়ে নিজের সংসার চালাতেন। তার মা দুই নাতনিকে ঢাকায় একটি স্কুলে ভর্তি করায়। তবে লকডাউন শুরু হওয়ায় স্বর্ণা ও ফারিয়া নবীপুর গ্রামে তার কাছে চলে আসে।
সোনিয়া দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘স্বর্ণা ও ফারিয়া আসার পর থেকেই রুনা তাদের পেছনে লাগে। আমি নিজের মতো করে থাকলেও বুঝতে পারতাম সে আমার মেয়েদের হত্যার পরিকল্পনা করছে। কিছুদিন আগে আমার ছেলে শুভ মিয়াকে (১৩) নবীপুর তামিরুল উম্মাহ এতিমখানা ও মাদরাসা থেকে মা পরিচয় দিয়ে আনতে যায় রুনা। তখন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমাকে ফোন দিলে তাকে সতিন বলে পরিচয় দেই। তাদের এও বলি, রুনার কাছে আমার ছেলেকে দিয়েন না, দিলে মেরে ফেলবে। শুক্রবার সে আমার মেয়েদের মেরে ফেলে।’ এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন সোনিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুমনের সঙ্গে বিয়ের আগে আরও ৪ বার রুনার বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী ও স্ত্রী দুজনে মিলে মাদকব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। শক্ত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসায় পরিচালনা করায় এলাকার লোকজনও তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মনজুর আলম দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘শিশুদের উদ্ধারের পর তাদের থুতনির নিচে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের ধারণা পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে। লাশ দুটি মর্গে আছে।’
‘এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। শিশু দুটির বাবা সুমন ও সৎ মা রুনাকে গ্রেপ্তাও করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে’, বলেন ওসি।
Comment here