আগামী ১৭ জুন সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। আজ শুক্রবার ও কাল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি; রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। সেই ছুটি শুরুর আগে গতকাল ছিল শেষ কর্মদিবস। দুপুরের পর থেকে সড়কপথে তাই গ্রামমুখী যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলোতে বাড়ে ভিড়। একই অবস্থা দেখা যায় কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও। এ ছাড়া ব্যক্তিগত যানবাহন, মোটরসাইকেল ও খোলা ট্রাকযোগেও গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছুটতে দেখা গেছে অসংখ্য মানুষকে। এরই মধ্যে বিকালের ঝড়বৃষ্টিতে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি অনেক বেড়ে যায়।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল বিকাল ৫টায় প্রায় দেড় ঘণ্টার জন্য সদরঘাটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে পরিস্থিতি অনেকটাই দুঃসহ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে যাত্রীদের ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। গাড়ির চাপে দীর্ঘ লাইন হতে শুরু করে মহাসড়কে। যানজটে যোগ হয় জলজটও। এর সঙ্গে ছিল পশুবাহী গাড়ির চাপও। এমনকি ঢাকা থেকে বের হতে গিয়েও দীর্ঘ অপেক্ষার মুখে পড়ে বাস। অন্যদিকে কমলাপুরে রেলযাত্রায় বিলম্বের কারণে ভুগতে হয় যাত্রীদের। উপরন্তু পশ্চিমাঞ্চলে ছিল ট্রেনের সংকট। একটি ট্রেন ফিরতে ফিরতে দুটি ট্রেনের যাত্রার সময় পেরিয়ে গেছে। এমন সব দুর্ভোগে শুরু হলো এবার গ্রামমুখী মানুষের ঈদযাত্রা।
বরাবরের মতো এবারও বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কিন্তু বাস্তবতাও আগের মতোই; অতিরিক্ত হারেই চলছে ভাড়া আদায়। কার্যকর প্রতিকার নেই। সংস্থাটি বলছে, রাজধানীর প্রতিটি বাস
টার্মিনালে কন্ট্রোলরুম ও অভিযোগ বাক্স বসানো হয়েছে তাদের তরফে। কিন্তু যাত্রীরা বলছেন, এগুলো ‘লোকদেখানো’। ঈদযাত্রায় বাড়তি ভাড়া আদায় চলছে অন্যবারের মতোই।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া বন্ধে নজরদারি চালানো হচ্ছে। আর নির্দেশ অমান্য করলে, মহাসড়কে হাট বসানো হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর জানায়, সারাদেশে ১৫৫টি স্পটকে তীব্র যানজটপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৮টি; ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৫২টি; ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৬টি; ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৪১টি এবং ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা মহাসড়কে ৮টি স্পট। গাড়ির ইউটার্ন, সড়কজুড়ে বাজার, অবৈধ দখল, চলমান নির্মাণকাজ, সড়ক আটকে বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা এবং বাস কাউন্টারগুলো যানজটের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কোরবানির পশুবাহী ট্রাকের কারণেও যানজট বাড়ছে। ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ঈদযাত্রায় এবার ১২টি স্থান দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ এবং ওভারপাসের নির্মাণকাজ চলতে থাকায় ঈদের আগের দিনগুলোতে বড় ধরনের যানজটের আশঙ্কা করছেন এই সড়কের যাত্রী ও চালকরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্ভোগ নিরসনে যানজটপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে একটি ওভারপাস খুলে দেওয়া; বন্ধ লেন চালু করা এবং কিছু কিছু স্থানের সংস্কার করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে। বরাবরের মতো এবারও ঈদের ছুটিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, যাত্রী পরিবহনে প্রস্তুত বিআরটিসি। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন গন্তব্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছে এ করপোরেশন।
এদিকে সদরঘাট নদীবন্দরে গতকাল বিকালে ঝড়বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ৪৭টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে টার্মিনাল ছাড়ে। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির জানান, ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস হওয়ায় যাত্রী চাপ ছিল অনেক বেশি।
অন্যদিকে প্রথম দিনের মতো গতকালও ঢাকা থেকে বেশ কিছু ট্রেন দেরিতে ছেড়ে যাওয়ায় অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয় অসংখ্য যাত্রীর। তদুপরি বৃষ্টি হওয়ায় তাদের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। কমলাপুর রেলস্টেশনের আশপাশের সড়ক ডুবে যাওয়ায় ভারী ব্যাগ নিয়ে স্টেশনে পৌঁছতে বাড়তি হ্যাপা পোহাতে হয়। গতকাল ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিন দেখা যায়, প্ল্যাটফর্মে, ট্রেনের ভেতরে বসে চলে যাত্রীদের অপেক্ষা- কখন ছাড়বে ট্রেন। অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ১৫ মিনিট দেরিতে স্টেশন ছেড়ে যায় ১১.৪৫ মিনিটে। নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস বেলা ১১.৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়ে ১২.২৫ মিনিটে। রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ২.৪০ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও প্ল্যাটফর্মে আসে ৪.০৫ মিনিটে, ছেড়ে যায় বিকাল ৫টার দিকে। অন্যান্য ট্রেনেরও একই অবস্থা।
গতকাল বিকালে কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শনে যান রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। তিনি যাত্রীদের সঙ্গে কুশলবিনিময়ও করেন। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জিল্লুল হাকিম বলেন, গত ঈদে রেলের সার্ভিস ভালো হয়েছে। এতে করে অনেকেই বলেছেন, আমি প্রথম পরীক্ষায় নাকি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি। আমাদের সীমিত সামর্থ্যে এবারও ভালো করতে চাই। আশা করি, এবারও গোল্ডেন এ প্লাস পাব। এ সময় তার সঙ্গে রেলপথ সচিব হুমায়ুন কবীর, মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী উপস্থিত ছিলেন।
Comment here