নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরে মৃত্যুর কোলে অনেকেই করোনা উপসর্গে মারা গেলেন ১৩ - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়ি ফিরে মৃত্যুর কোলে অনেকেই করোনা উপসর্গে মারা গেলেন ১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে করোনা ভাইরাস। দুদিন ধরে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত শত রোগী গড়ে শনাক্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে চারটি জেলায় একাধিক ক্লাস্টারে কমিউনিটি সংক্রমণ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলায়। তাই এ জেলাটি ক্লাস্টারের চেয়ে বেশি, অর্থাৎ সংক্রমণের এপিসেন্টারে পরিণত হয়েছে বলে মনে করে আইইডিসিআর। বেশ কিছুদিন

ধরেই করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকের মৃত্যুর খবর আসছে বিভিন্ন জেলা থেকে। তাদের মধ্যে অনেকেই করোনা পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ কিংবা রাজধানী থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন।

প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর

ফেনী : নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেনী আসার প্রায় দুই সপ্তাহ পর জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে গত বুধবার রাতে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধে মৃত্যু হয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জে একটি মাছের আড়তে চাকরি করতেন বলে জানায় স্থানীয়রা। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই বৃদ্ধের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামে বিআইটিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : করোনা উপসর্গ নিয়ে আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নে এক নারীর (৫০) মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার রেইনা। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ওই নারী কয়েকদিন ধরেই জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন বলে জানা যায়। গত বুধবার রাতে তিনি মারা যান।

গাইবান্ধা : গোবিন্দগঞ্জে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে শুক্রবার ভোরে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। শিশুটির মা-বাবা ঢাকায় এবং সে বাড়িতেই থাকতো। কিন্তু কাজকর্ম না থাকায় বাবা-মা গত ৫ এপ্রিল বাড়িতে ফিরে আসেন।

লক্ষ্মীপুর : কমলনগরে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তার বাড়ির ১২টি ঘর লকডাউন করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের জানান, ওই শিক্ষক তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। বুধবার জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাকে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

টাঙ্গাইল : করোনার উপসর্গ নিয়ে বুধবার রাতে টাঙ্গাইল পৌর এলাকায় এক ব্যক্তির (৪২) মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রামাপদ রায় জানান, সংবাদ পেয়েই ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে করা কমিটির মাধ্যমে তার লাশ দাফন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মৃতেসহ আশেপাশের কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর : শ্রীপুরের গোসিঙ্গা এলাকায় শ্বাসকষ্টে এক যুবকের (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। তার দেহে করোনা ভাইরাস রয়েছে কি না তা নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় ভূষণ দাস। তবে ওই যুবক দীর্ঘদিন ধরেই যক্ষ্মা রোগে ভুগছিলেন। তারপরও সতর্কতা হিসেবে মৃতের বাড়ির সবাইকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার জন্য বলা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম : জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীর (৩০) মৃত্যু হয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এ কর্মকর্তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বুধবার ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয়। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা, তা পরীক্ষায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়।

শেরপুর : জ¦র, ঠান্ডা ও কাশিতে ভোগার পর শেরপুরের সাতপাকিয়ায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনার পর তার নমুনা সংগ্রহের পর ১৬টি বাড়ি লকডাউন করে দেওয় উপজেলা প্রশাসন। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজ আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নওগাঁ : জেলার মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৫৮ বছর বয়সী এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। হাপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস জানান, বুধবার রাতে শ্বাসকষ্ট, জ্বর ও ডায়েরিয়া নিয়ে ওই ব্যক্তিকে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসোলেশনে রাখা হয়। সেখানেই তিনি পরদিন ভোরে মারা যান। যেহেতু তার মধ্যে করোনার কিছু উপসর্গ ছিল, তাই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

নাটোর : করোনা উপসর্গ নিয়ে বগুড়ার মোহম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাটোরের সিংড়া উপজেলার এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় পুরো গ্রামকে সর্তকতাবস্থায় রাখা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আমিরুল ইসলাম জানান, ৪০ বছরের ওই গৃহবধূ ডায়াবেটিস, কিডনি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

পাথরঘাটা (বরগুনা) : জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তির ঘণ্টাখানেক পরই এক বৃদ্ধের (৬৫) মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবুল ফাত্তাহ জানান, মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আইইডিসিআর থেকে রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।

সখীপুর (টাঙ্গাইল) : জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক স্কুল শিক্ষকের (৫৩) মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাতে উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের দিঘীরচালা গ্রামে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুস সোবহান জানান, ওই শিক্ষক করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার বাড়ির সব লোকজনকে বলা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে।

সাঁথিয়া (পাবনা) : করোনার উপসর্গ নিয়ে পাবনার সাঁথিয়ায় গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ৪৮ বছরের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাতেমা তুজ জান্নাত জানান, করোনা সন্দেহে বুধবার ওই নারীর রক্ত সংগ্রহ করে পাবনা পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। সেই সঙ্গে বর্র্তমান অবস্থার পরিপেক্ষিতে সতর্কতার জন্য তার বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে।

Comment here