কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন হবে ২৮ অক্টোবর। নির্বাচনের আগে এর বাইরে চট্টগ্রামের আরও একটি বড় অবকাঠামো উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। নগরীর লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আগামী নভেম্বরে উদ্বোধন হবে। এমনটি হলে ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগেই উড়াল সড়কটিতে উঠবে গাড়ি। চট্টগ্রামে নির্মিত চারটি উড়ালসড়কের মধ্যে এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ, এর কার্যকারিতাও অনেক বেশি হবে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কর্মকর্তারা।
প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, আগামী নভেম্বরের মধ্যে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ করতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। নভেম্বরের মধ্যে এটি চালু করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সিডিএ সূত্র জানায়, সাড়ে ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল উড়ালসড়কের মধ্যে ইতোমধ্যে সাড়ে ১২ কিলোমিটার অংশের পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। শেষ মুহূর্তে দেওয়ানহাট থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত অংশের র্যাম তৈরি ও গার্ডার বসানোর কাজ চলছে দিনে-রাতে। এই উড়ালসড়কে ১৪টি র্যাম থাকলেও আপাতত একটির কাজ শেষ করে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করতে চায় সিডিএ। সম্প্রতি পূর্ত সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন সিডিএ পরিদর্শন করে প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়ে যান।
জানা গেছে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখেই মূলত সরকার চায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি তুলতে। কারণ কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলটির কার্যকারিতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে নতুন এই উড়ালসড়ক। বর্তমানে দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে আসা যানবাহনের প্রায় শতভাগই শাহ আমানত সেতু ব্যবহার করে। ফলে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত একটি বড় সময় সেতু এলাকা
যানজটে ডুবে থাকে। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে এসব গাড়ির একটি বড় অংশ শহরে প্রবেশের বিকল্প পথ খুঁজে পাবে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস আমাদের সময়কে বলেন, যানজট নিরসন ছাড়াও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নগরবাসীর দুটি বড় কাজে আসবে। এখন যেখানে বিমানবন্দরে যেতে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লেগে যায়, সেখানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে ১৫ থেকে ২০ মিনিটে বিমানবন্দর যাওয়া সম্ভব হবে। আবার বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে যেসব গাড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে শহরে প্রবেশ করবে, সেগুলোও এই উড়ালসড়ক ব্যবহার করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে শহরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারবে। তিনি বলেন, আগামী নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করবেন। আমরা সে লক্ষ্যে দিনে-রাতে কাজ করছি।
নির্বাচনকে সামনে রেখে তড়িঘড়ি করে এই উড়ালসড়ক উদ্বোধন করতে গিয়ে র্যামগুলোর কাজে হাত দিচ্ছে না সিডিএ। আপাতত লালখানবাজারে একটি র্যাম চালু করেই এই অবকাঠামোতে গাড়ি তুলে দিতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এ প্রসঙ্গে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বলেন, এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ১৪টি র্যাম থাকবে। সেগুলোর কাজ আগামী জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি। আপাতত আমরা মূল অবকাঠামোর কাজ শেষ করে এটি চালু করে দিতে চাই।
৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর লালখানবাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। শুরুর দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসায় নকশা পরিবর্তন করে কাজ শুরু করতে দেরি করে ফেলে সিডিএ। চট্টগ্রামের নতুন এই উড়ালসড়কের নামকরণ করা হয়েছে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারীদের একজন ছিলেন প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এ রাজনীতিবিদ ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের মেয়র ছিলেন।
প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান জানান, মূল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রশস্ততা ৫৪ ফুট। র্যামগুলোর প্রশস্ততা থাকবে ২০ ফুট করে। শহরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট থেকে এই উড়ালসড়কে ওঠানামার ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, মূল উড়ালসড়কের ৮৫ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
Comment here