পণ্যের দাম ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ কমানো, কারসাজি : মির্জা ফখরুল - দৈনিক মুক্ত আওয়াজ
My title
সারাদেশ

পণ্যের দাম ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ শতাংশ কমানো, কারসাজি : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : রমজানের এক-দুই মাস আগে পরিকল্পিতভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কৌশলে ২০ শতাংশ বাড়িয়ে সপ্তাহখানেক পরে ৫ শতাংশ কমানো হয় বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, এটা সিন্ডিকেটকারিদের নতুন কারসাজি। এ ছাড়া সারা দুনিয়ায় ধর্মীয় উৎসবের সময় জিনিসপত্রের দাম কমে। অথচ বাংলাদেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) থেকেও দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে। যা বাজারের মূল্যবৃদ্ধিতে নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে।

আজ মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চিত্র তুলে ধরে এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেটকারিদের এক নতুন কারসাজির বিষয়ে বলতে চাই। আগে রমজান এলে পণ্যের দাম বাড়তো, আর এখন রমজান মাস আসার ১-২ মাস আগেই কৌশলে দাম বাড়ানো হয়। আবার রোজার সপ্তাহ খানেক আগে একটু কমানো হয়। পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হয় ২০ শতাংশ আর সপ্তাহ খানেক আগে কমানো হয় ৫ শতাংশ। যাতে করে এই চক্র বলতে পারে, পণ্যের দাম কমেছে। এই ধরনের অপকৌশল ভোক্তাদের সঙ্গে ভয়াবহ প্রতারণার শামিল। সবচেয়ে, ভয়ংকর বিষয় মুল্যবৃদ্ধির এই প্রতারক ও দুর্নীতিবাজ চক্রের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে সরকারের চালিকা শক্তিরাই। যারা, আজকে মহামারি করোনার টিকা নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ঘৃণ্যতম মনোপলি ব্যবসা করছে, তারাই আধুনিক কর্পোরেট বাণিজ্যে বন্ধুত্বের মিথ্যা আষাড়ে গল্প শুনিয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে সমস্ত জাতিকে ঠেলে দিচ্ছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এবারে যেমন টিসিবি পবিত্র রমজান মাসের আগে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে বাড়ালো ১০ টাকা। সংস্থাটি প্রতি লিটার তেল ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। এ নিয়ে টিসিবি জানুয়ারির পর দুই দফায় লিটারে ২০ টাকা বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম। শুধু সয়াবিন তেল নয়, টিসিবি চিনির দামও কেজিতে ৫ টাকা করে বাড়িয়েছে। এখন সংস্থাটি প্রতি কেজি চিনি ও মসুর ডাল ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করছে।’

এ সময় টিসিবি হিসাব তুলে ধরেন ফখরুল। জানান, গত এক বছরে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, পাইজাম চালের দাম বেড়েছে ২২ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া আটার দাম ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ ও ময়দার দাম বেড়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। গণমাধ্যমে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত সংবাদ মোতাবেক জানা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। খুচরা দোকান থেকে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা লাগছে। বাছাই করা পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হচ্ছে।

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘রমজানকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে, চিনি, আটা, গুঁড়া দুধ, তেল, পিয়াজ, আদা, রসুন, বেগুন, খেজুর, শসা ও লেবু সবকিছুর দাম ইতিমধ্যেই অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি বোঝাতেই একটা উদাহরণই যথেষ্ট। বাজারে ছোট ৪টা লেবুর দাম ৫০ থেকে ৭০ টাকা। করোনায় গরিবের ভিটামিন সি সরবরাহের প্রধান উৎস লেবুও এখন সাধারণের নাগালের বাইরে। মহামারি করোনাকালীন সময়েও সাধারণ মানুষের পকেট কেটে সরকারের দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের লুটপাট বিন্দুমাত্র কমেনি তা টিসিবির দেওয়া বাজার দরের এই তুলনামূলক চিত্রই প্রমাণ করে।’

সংবাদ সম্মেলনে উদাহরণ হিসেবে নিত্যপণ্যের এক বছরের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘টিসিবির হিসেবে গত বছর মোটা চাল প্রতি কেজি ৩৪-৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, বর্তমানে ৪৪ থেকে ৫২ টাকা। এক বছরে ২৯ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ ২০০৬ সালে ১ কেজি মোটা চালের দাম ছিল ১৩ থেকে ১৭ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার গত বছর ১০০-১০৮ টাকা, বর্তমানে ১৩৫-১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যা এক বছরে লিটারে ২৯ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি ও মাংসের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ১০-১২ টাকা। খুচরা বাজারে বেগুন এখন ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪০ টাকার হাইব্রিড শসা ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি শসাতো ১০০ টাকা দাম হাঁকছে। লেবুর হালি ৫০-৭০ টাকা উঠেছে। এক সপ্তাহ আগে মূল্য ছিল ৪০ টাকা। বাজারে সোনালি মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩৫০-৩৬০ টাকা। এক মাস আগেও ছিল ২০০-২৫০ টাকা। দেশি কক মুরগি কয়েকদিন আগে ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন যা ৫৫০ টাকা দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। সাদা ব্রয়লার ১৫০ -১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, এক মাস আগে যার মূল্য ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। গরুর গোশত ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়। অথচ এই গরুর গোশতের দাম মার্চের মাঝামাঝিতেও ছিল ৫৫০-৫৬০ টাকা।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘রমজানে খেজুর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। অথচ খেজুরের দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, যা গত বছর বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকায়। গাছ পাকা মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়, যা গত বছর বিক্রেতারা ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। আরব আমিরাতের ভালো মানের বরই খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়, যা গত বছর একই সময় বিক্রি হয়েছে ২৫০-৩০০ টাকায়।’

বিভিন্ন সময় যখন কিছু মহল বিএনপির সরকারের সাথে একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের কাজের সাথে তুলনা করে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘একদিকে আমরা যেমন হতাশ হই, তেমনি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে একটি ভুল বার্তা যায়। সে প্রেক্ষাপটে আমরা যেকোনো তুলনামূলক বর্ণনা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি। তবুও চালের মত একটি মৌলিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তুলনার মাধ্যমে বিএনপি সরকারের দায়িত্বকালীন সময়ের সাথে বর্তমান অগণতান্ত্রিক লুটেরা সরকারের পার্থক্য তুলে ধরছি। ২০০৬ সালে এক কেজি মোটা চালের দাম ছিল গড়ে ১৫ টাকা। বর্তমানে মোটা চালের দাম গড়ে ৫০ টাকা। মূল্যবৃদ্ধি ৩ গুনেরও বেশি। ২০০৬ সালে ১০০ টাকায় প্রায় ৭ কেজি মোটা চাল কেনা যেতো। বর্তমানে ১০০ টাকায় মোটা চাল কেনা যায় ২ কেজি প্রায় ৫ কেজি কম চাল পাওয়া যায়। আয় সক্ষমতা যদি ২ গূণ বৃদ্ধি পায়; এরপরেও ২০০৬ সালের সম পরিমান ক্রয় সক্ষমতা অর্জন অসম্ভব।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের সময় যে ধরনের লাগামহীন দুর্নীতি চলছে মুলত তারই ধারাবাহিকতায় লুটেরা সরকারের সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনাও জিম্মি হয়ে আছে। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার দূরীকরণের কোনো বিকল্প নাই। এ সরকারের জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই বিধায় তারা জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে নিদারুণভাবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় হয়ে পড়েছে। এমতাবস্তায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপির নেতৃত্বে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণময় সরকার প্রতিষ্ঠার সামগ্রিক আন্দোলনে অংশ নিতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

 

Comment here