সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের পদযাত্রা কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের কাক্সিক্ষত সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। এ কারণে পদযাত্রা নিয়ে আরও কিছু দিন মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঢাকায় আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি এবং অন্য মহানগরে ১৮ ফেব্রুয়ারি পদযাত্রা করবে বিএনপি। একই কর্মসূচি পালন করবে সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোট। মহানগরের পর আবার তৃণমূলে একই কর্মসূচি করবে।
গত সোমবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে নতুন করে পদযাত্রার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘পদযাত্রা কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আমরা মহানগরের পর উপজেলা পর্যায়ে আবারও কর্মসূচি করব।’
জানা গেছে, মহানগরের পর উপজেলা, থানা এবং পৌরসভায় কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর পর আবার জেলায় জেলায় কর্মসূচি শেষ করে মহানগরে কর্মসূচি পালন করা হবে। এভাবে কর্মসূচির সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে হাঁটতে চায় বিএনপি।
গত ২৮ জানুয়ারি বাড্ডা সুবাস্তু টাওয়ার থেকে মালিবাগ আবুল হোটেল, ৩১ জানুয়ারি গাবতলী থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর এবং ১২ ফেব্রুয়ারি শ্যামলী ক্লাব মাঠ থেকে বছিলা পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। গত ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর এবং মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা? কর্মসূচি করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি করে বিএনপি। এসব কর্মসূচি নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়।
সোমবারের বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরের পদযাত্রা কর্মসূচি ‘ব্যাপকভাবে’ সফল হয়েছে বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা। বিশেষ করে মহানগরের নেতারা বিভেদ ভুলে পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ঢাকা মহানগর বিএনপি সাংগঠনিকভাবে এখনো চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত নয়। এই অবস্থায় মহানগরের সাংগঠনিক সক্ষমতা পরখ করতে থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে আরও বেশি বেশি কর্মসূচি দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়ার্ডেও কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে ইউনিয়ন পর্যায়ের ৮০ শতাংশ পদযাত্রা সফল হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, এবারের কর্মসূচিতে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের হামলা, বাধা, পুলিশের গুলি- সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল। এর পরও নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলেন। পুলিশি বাধা অতিক্রম করার চেষ্টা করেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাঠে লড়াই করেছেন। এসব অর্জন পদযাত্রা কর্মসূচির জন্যই এসেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এখন নেতাকর্মীদের কোনো অবস্থায়ই রাজপথ ছাড়া করা যাবে না। কারণ বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে এখন সাধারণ মানুষও অংশ নিচ্ছেন।
দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কর্মসূচি পালনে নেতাকর্মীদের দৃঢ়তায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। দলের নীতিনির্ধারকরা বলেন, হাট, বাজার ও গ্রামে গ্রামে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাধারণ জনগণও কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। মানুষ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে মাঠে নেমেছেন। এতে প্রমাণ হয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারবিরোধী জনমত গড়ে উঠেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলা-বাধার পরও নেতাকর্মীরা মাঠ ছেড়ে যাননি। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে নেতাকর্মীরা বেশি ঝুঁকি নিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। নেতাকর্মীদের এ ধরনের সাহসিকতা বড় আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণে নীতিনির্ধারকদের উদ্বুদ্ধ করছে।
Comment here